এনআইডিতে মায়ের চেয়ে ১৩ বছরের বড় ছেলে, গেল চাকরিও

পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাকু দাসের বয়স এনআইডিতে ৫৯। এ জন্য সিটি করপোরেশনে অস্থায়ী চাকরিটিও গেছে তাঁর
ছবি: প্রথম আলো

মায়ের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩ আগস্ট। কিন্তু ছেলের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল। অর্থাৎ, মায়ের ১৩ বছর ৩ মাস আগে ছেলের জন্ম।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাকু দাসের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে ঘটনাটি এমনই। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী, ৫৯ বছরের বেশি হওয়ায় অস্থায়ী কর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত ৩০ অক্টোবর ১২৮ জন অস্থায়ী কর্মী চাকরি হারান। তাঁদের একজন পাকু।

কী কারণে হঠাৎ চাকরি চলে গেল তাঁর? কারণ প্রথমে জানতেন না পাকু। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানেন, ৫৯ বছরের বেশি বয়স হওয়ায় তাঁর চাকরি চলে গেছে।

পাকুর মা রাধা রাণী দাস বলেন, ছেলের বয়স ৩০ থেকে ৩২ বছরের বেশি হবে না।

চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাকু দাস। মা, স্ত্রী ও এক সন্তানের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। সিটি করপোরেশনের চাকরির সুবাদে থাকেন নগরের মাদারবাড়িতে সেবক কলোনিতে। এখন চাকরি চলে যাওয়ায় কলোনিতে থাকা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় চাকরি ফেরত পেতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিচ্ছেন পাকু দাস ও তাঁর মা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত মা-ছেলে বলছেন, চাকরি না থাকলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হবে।

নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে প্রতিদিন ছুটে আসেন মা-ছেলে।

সম্প্রতি কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। মা রাধা রাণী দাস বলেন, ছোট বয়সে পাকুর বাবা মারা যান। তিনি নিজে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি নিয়েছিলেন। অনেক কষ্টে ছেলেকে বড় করেছেন। ছেলে বড় হয়ে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি নেন। এখন ছেলের এভাবে চাকরি যাওয়ায় তাঁরা কোনো অন্ধকার দেখছেন। সবার কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোনো আশ্বাস দিচ্ছেন না।

রাধা রাণী দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা অশিক্ষিত মানুষ। লেখাপড়া জানি না। জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়েছিলাম। তারা সব করে দিয়েছিল। এখন শুনি ছেলের বয়স আমার চেয়ে বেশি। আমার বয়সই ৫৯ হয় নাই। সেখানে ছেলের বয়স হয়ে গেছে ৫৯ বছরের বেশি। এ জন্য চাকরিটাও চলে গেল ছেলের। তার (ছেলের) বেতনের টাকায় চলতাম। এখন মানুষের দয়া-দাক্ষিণ্যে চলতে হচ্ছে।’
চাকরি হারিয়ে বিপর্যস্ত পাকু দাস বলেন, চাকরির জন্য প্রতিদিন অফিসে আসতেছেন। কোনো সমাধান হচ্ছে না। বেতনও পাচ্ছেন না।

পাকু দাসের জাতীয় পরিচয়পত্র ভুলের বিষয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র ভুল হতে পারে। তবে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। যদি সংশোধনের আবেদন করেন, তাহলে তা বিবেচনা করা হবে।

আর সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে যাদের বয়স ৫৯ বছরের বেশি হয়েছে, তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাকু দাসের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে মেয়রের কাছে আবেদন করলে আবার চাকরি ফেরত পেতে পারেন পাকু।