১ যুগ ধরে দা–ছুরি বানালেও কোরবানির সামর্থ্য হয়নি তাঁর

কামারের কাজ করে আসা মো. আজাদ এখন নিজেই দোকান দিয়েছেনছবি: প্রথম আলো

প্রায় এক যুগ আগে কারওয়ান বাজারে খালুর কাছে এসেছিলেন মো. আজাদ। খালুর দোকানেই দা-বঁটি ও ছুরি-চাপাতি বানানো ও ধার দেওয়ার কাজ নেন। কাজ শিখে আজাদ এখন একাই ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। চেষ্টা করছেন নিজেদের টানাটানির সংসারে একটু স্বস্তি দেওয়ার।

পবিত্র ঈদুল আজহা এলেই আজাদের দোকানে ছুরি-চাপাতির মতো সরঞ্জামের বিক্রি বাড়ে। সামর্থ্যবানেরা এসব সরঞ্জাম কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এক যুগ ধরে এগুলো নাড়াচাড়া করলেও আজাদের পরিবারের এখনো কোরবানি দেওয়া হয়ে ওঠেনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটে রোববার কথা হয় আজাদের সঙ্গে। ছুরি-চাপাতি ও দা-বঁটি থেকে শুরু করে মাংস কাটার সব সরঞ্জামই আছে তাঁর দোকানে। ক্রেতা আসছেন, দেখছেন। দরদামে মিললে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ভোলা সদরেই বাড়ি আজাদদের। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ছয়জনের পরিবারের ড্রেজার শ্রমিক বাবার জন্য সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়। তাই ২০১২ সালে আজাদ ঢাকায় পাড়ি জমান। এর পর থেকে খালুর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। এ সময় কামারের কাজ শিখেছেন, ব্যবসা বুঝেছেন। দুই বছর আগে একজনের দোকানের অর্ধেকটা ভাড়া নিয়ে আজাদ নিজেই ব্যবসায় নেমেছেন।

ব্যবসায় কতটা সুবিধা করতে পারছেন, সে হিসাবে এখনই যেতে চান না আজাদ। তবে এবারে ঈদের বিক্রি নিয়ে ততটা সন্তুষ্ট নন তিনি। কারণ, ক্রেতাদের মধ্যে নতুন সরঞ্জাম কিনতে আসা লোক কম। বেশির ভাগই চাপাতি, ছুরি ধার দিতে আসছেন। কিন্তু তাঁর দোকানে সে ব্যবস্থা এখনো করতে পারেননি, তাঁর কারখানা নেই।

আজাদের কথার মিল পাওয়া যায় মিউনিসিপ্যাল কর্মকার মার্কেটের কারখানাগুলোতে গিয়ে। আজাদের সঙ্গে কথা বলার আগে সেসব কারখানায় ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের লম্বা সারি। কারখানাগুলোতে মাংস কাটার সরঞ্জাম বানানোর পাশাপাশি রয়েছে সরঞ্জাম ধার দেওয়ারও ব্যবস্থাও। ফলে বেচাকেনা বেশি কারখানাকেন্দ্রিক।

আরও পড়ুন

মো. শফিক নামের একজন কারখানার মালিক জানান, রাত ১২-১টা পর্যন্ত শ্রমিকেরা ব্যস্ত থাকেন। ঈদের দিন সকালেও পরিস্থিতি বুঝে দোকান খোলা রাখা হয়।
তবে একসময়ের কামার আজাদ আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে হয়তো কিছু ক্রেতা আসবে। তাঁর মতে, গত বছর ঈদুল আজহায় বেশ বৃষ্টি থাকলেও ক্রেতা ছিল অনেক। কিন্তু এ বছর ক্রেতা তুলনামূলক কম।

এত বছর ধরে আজাদ কোরবানিকেন্দ্রিক উৎসবের অংশ হয়ে জীবিকা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোরবানি কি কখনো দিতে পেরেছেন? আজাদ জানালেন, সে সামর্থ্য এখনো হয়ে ওঠেনি। আর বাবা ড্রেজারশ্রমিক হলেও এই সময়টায় মাংস কাটার কাজ করে থাকেন। সেখান থেকে পাওয়া কিছু মাংস তাঁদের বাসায় যায়। তবে ব্যবসাটা ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে গেলে একদিন কোরবানি দিতে পারবেন—এমন আশায় আছেন আজাদ।

আরও পড়ুন

আজাদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা-বাবা ভোলায় থাকেন। চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে দোকান দিয়েছেন। মাসে ভাড়া ১২ হাজার টাকা। এখনো কর্মচারী রাখার মতো অবস্থা হয়নি। তাই নিজের ছোট ভাইকেই বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন। দুই ভাই মিলেই দোকান সামলান। বেচা-বিক্রি যা-ই হোক, ঈদের পরদিন ভাইকে নিয়ে বাড়ি যাবেন বলে জানালেন আজাদ।