ধানমন্ডির বাড়িটি সরকারের মালিকানাতেই থাকছে

সুপ্রিম কোর্ট
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের ২৯ (তৎকালীন ১৩৯/এ) নম্বর বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেওয়া রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এস নেহাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে বাড়িটি নিয়ে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের করা লিভ টু আপিল ও রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

আদেশের আগে নেহালের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একেক জায়গায় একেক রকম সই দেখা যাচ্ছে। কোনো আবেদনে ইনিশিয়াল সই, আবার কোনো দরখাস্তে পুরো নাম। একই দিন দুই জায়গায় দরখাস্তে সই একই হওয়ার কথা। জন্মতারিখ নিয়েও কাটাছেঁড়া দেখা যাচ্ছে। এই জালিয়াতি হলো কেন? আপনি বলছেন, ওকালতনামা রিপ্লেস হয়েছে। ওকালতনামার দরখাস্তে কোর্ট অব সেটেলমেন্টের সই ও সিল নেই।’

নেহালের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে চক্র থাকে। উল্লেখিত ঠিকানায় ভিন্নতা দেখা যায়। আপনি বলছেন, কোর্ট অব সেটেলমেন্টের ওকালতনামায় উনি (নেহাল) সই করেননি। তাহলে তো মামলাই থাকে না। লোকটি আপনি (নেহাল) কি না সন্দেহ হচ্ছে, নাকি সাজিয়েছে?’

বাড়িটি নিয়ে পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ২১ নভেম্বর কোর্ট অব সেটেলমেন্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে নেহাল চলতি বছর লিভ টু আপিল করেন।

গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত শুনানিতে আপিল বিভাগ বাড়ি নিয়ে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে করা দুটি মামলার নথি রাষ্ট্রপক্ষকে দাখিল করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল রোববার নথি দাখিল করে। শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন।

আদেশের আগে আদালতে নেহালের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন নকিব সাইফুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান শুনানিতে ছিলেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেহাল আহমেদের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেওয়া রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রইল। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের মালিকানায় থাকল। বাড়িসহ ধানমন্ডির ওই জায়গার আয়তন এক বিঘা। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি এখন সরকারের দখলে আছে।’

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুয়ায়ী, ১৯৭২ সালে বাড়িটির তৎকালীন মালিক ছেড়ে যাওয়ার পর সরকার ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করে। এই সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে মালিকানা দাবি করে আবেদ খানসহ তাঁর পরিবারের ৯ সদস্য ১৯৮৯ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে মামলা করেন। এই মামলায় ১৯৯২ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেওয়া রায়ে বাড়িটির পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্তিকে সঠিক বলা হয়। এরপর বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদ খান ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৬ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন।

অন্যদিকে, ১৯৮৭ সালের এক আবেদন দেখিয়ে নেহাল একই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে ১৯৯৬ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় ১৯৯৭ সালের ১৬ জুলাই এক রায়ে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করতে এবং নেহাল বাড়ির দখল পেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে একটি রিট করে। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। আবেদ খান ও সরকার পক্ষের পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে গত বছরের ২১ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ে নেহালের পক্ষে সেটেলমেন্ট কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল এবং আবেদ খানের রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, নেহালের পক্ষে ১৯৯৬ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে রায়ের পর তার বাস্তবায়ন চেয়ে তিনি হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। হাইকোর্ট তাঁর পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। এর বিরুদ্ধে ২০১৭ ও ১৮ সালে সরকারপক্ষ আপিল বিভাগে পৃথক লিভ টু আপিল ও রিভিউ আবেদন করে। একসঙ্গে শুনানি নিয়ে সরকারপক্ষের করা এসব আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।