‘এত ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়া যে আইপিএসে কাজ হচ্ছে না’

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এই গরমে হাসপাতালে থাকা ফ্যানের বাতাসে কাজ হচ্ছে না। তাই স্বজনেরা টেবিল ফ্যান কিনে এনে একটু স্বস্তি দিতে চেষ্টা করেন রোগীদের। রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: সৌরভ দাশ

শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন ৬৮ বছর বয়সী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুল কবির। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে শনিবার চট্টগ্রামে ফিরেছেন। এমনিতেই অসুস্থ তার ওপর বিদ্যুৎ না থাকায় খুব কষ্টে আছেন জানিয়ে বললেন, এভাবে যদি বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবেন।

মোস্তাফিজুল কবির বলেন, একবার বিদ্যুৎ গেলে আসে ঠিক এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাড়িতে আইপিএস (ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই) থাকলেও এত ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা–যাওয়া চলছেই যে তা দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তাই অসহনীয় অবস্থায় দিন পার করতে হচ্ছে তাঁকে।

বিদ্যুৎ নিয়ে এমন দুর্ভোগের কথা শুধু মোস্তাফিজুল কবিরের নয়, চট্টগ্রামের প্রায় সব বাসিন্দা আছেন কষ্টে। তাঁদের এই ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে চলমান তাপপ্রবাহ। এর মধ্যেই জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঘরের বাইরে বের হলেই রোদে পুড়তে হচ্ছে তাদের। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, প্রবীণ ও শিশুরা।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুল কবির নগরের লোডশেডিংয়ের একটি হিসাব দিয়ে রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে।

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। তাই গরম থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে থাকা পানির পাইপ থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে একটু স্বস্তি পেতে চেষ্টা করেন লোকজন। রোববার চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

এভাবে বিদ্যুৎ না থাকলে মোস্তাফিজুল কবিরের মতো প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের অবস্থা কী হতে পারে তা সহজে অনুমেয়। শুধু তিনি নন, ঘরে আট মাস বয়সের নাতনিরও গরমে অবস্থা খারাপ। মোস্তাফিজুল কবির বলেন, প্রচণ্ড গরমে শিশুদের কী কষ্ট হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না।

লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও কোনো সন্তোষজনক জবাব পাননি বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তা।

নগরের প্রবর্তক এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, রোববার সারা দিনে ১০ ঘণ্টার মধ্যে অর্ধেক সময়েও বিদ্যুৎ ছিল না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গেছে ছয়বার। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হয়েছে। জেনারেটর থাকলেও একপর্যায়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে। কারণ, টানা চালু রাখায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে। বারবার লোডশেডিং হওয়ায় অফিসের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

একই অবস্থায় আছেন নগরের খরমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল। তিনি জানান, রাত ১১টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে পাঁচবার। একে গরম, তার ওপরে লোডশেডিংয়ে ঘরে থাকা দায় হয়ে গেছে। এর মধ্যেই মশার প্রকোপ। বাচ্চাদের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হচ্ছে।

বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি কবে পাল্টাবে আর কবে থেকে লোডশেডিং কমবে, তার কোনো উত্তর নেই পিডিবির কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁদের বক্তব্য একটাই, গরমের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এর মধ্যে বিদ্যুতের বেশি ঘাটতি ছিল শনিবার। এদিন বেলা ১১টায় ১ হাজার ৪২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যায় ১ হাজার ১১৬ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় ৩০৭ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। সন্ধ্যার পরে ঘাটতি আরও বেড়ে যায়। সন্ধ্যা সাতটায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৫৯৮ মেগাওয়াট। তবে পাওয়া যায় ১ হাজার ২০১ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৩৯৭ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ–সংকট নিয়ে জানতে চাইলে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানিসংকটে সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য লোডশেডিং করতে হচ্ছে।