ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন অনেক পরিপক্ব

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী গতকাল সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

মতবিনিময় সভায় কথা বলছেন ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। পাশে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্‌ফুজ আনাম। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে
ছবি: সংগৃহীত

আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন অনেক পরিপক্ব।

গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ভারতীয় হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।

বিক্রম দোরাইস্বামী ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত জটিলতা, সামুদ্রিক বিরোধসহ বিভিন্ন বড় বড় সমস্যা এরই মধ্যে আমরা সমাধান করেছি। ২০ বছর আগের তুলনায় বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন অনেক পরিপক্ব।’ এ সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য লজিস্টিক ব্যবস্থা সহজীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নৌ ও রেলপথের মতো সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগের নতুন নতুন রুট গড়ে তোলার পরামর্শ দেন দোরাইস্বামী।

আরও পড়ুন

দ্বিপক্ষীয় বাণ্যিজ্য ও পরিবহন যোগাযোগের উন্নতি হলে শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও তা বড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো উচ্চ ব্যয়। দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি হওয়া পণ্যের সিংহভাগই স্থলপথে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে দক্ষতার একটা বড় ঘাটতি থেকে গেছে। আবার এটা পরিবেশবান্ধবও নয়। একটি ট্রাকে সর্বোচ্চ ১৫ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা যায় এবং সেই ট্রাককে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন ব্যয়বহুল ও কঠিন হওয়ার এটাই একমাত্র কারণ।

ভারতীয় হাইকমিশার বলেন, আঞ্চলিক দেশগুলোর বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সময়ের দাবি।

জ্বালানির সংযুক্তির ওপর জোর দিয়ে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, সঞ্চালনব্যবস্থার সম্প্রসারণ ছাড়া এটি সম্ভব নয়। বিদ্যমান সঞ্চালনব্যবস্থার পুরোটাই ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বহরমপুর থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও প্রায় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে ত্রিপুরা থেকে। এ দুটি ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আর কোনো সঞ্চালন লাইন নেই। তিনি বলেন, ভারত গ্রিড সঞ্চালনব্যবস্থার উন্নয়নে আগ্রহী, যা বাংলাদেশের গ্রিডকে শক্তিশালী করবে। তখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরও বিনিয়োগ আসবে।

হাইকমিশার বলেন, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য পরিবহন সংযোগ তৈরি করতে পারলে দুই প্রতিবেশী দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ স্থল সীমান্ত ভারতের সঙ্গে। শুধু ভারত-বাংলাদেশই নয়, পুরো উপ-অঞ্চলই এর সুবিধা পাবে।

ভবিষ্যতে এই যোগাযোগ, বিশেষ করে সমুদ্রপথে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে পোর্ট ক্লাং, সিঙ্গাপুর বা কলম্বো হয়ে চলাচল করতে হয়।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্‌ফুজ আনামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, ইত্তেফাক–এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সংবাদ-এর সম্পাদক আলতামাশ কবির, নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির, ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সমকাল–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, ঢাকা ট্রিবিউন-এর সম্পাদক জাফর সোবহান ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।