ইরাক: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিজয়

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ইরাকের জাতীয় পতাকাছবি: রয়টার্স

বিজয় মানেই সব সময় বিদেশি ঔপনিবেশিক শক্তিকে তাড়ানো নয়; কখনো কখনো বিজয় মানে হলো নিজ ঘরের ভেতরে বেড়ে ওঠা অশুভ ছায়াকে পরাজিত করে আলোর পথে ফেরা। আজ ১০ ডিসেম্বর, ইরাকের ‘বিজয় দিবস’ (ভিক্টোরি ডে)। ২০১৭ সালের এই দিনে ইরাক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস বা দায়েশ) বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছিল।

২০১৪ সাল। ইরাকের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। দেশটির বিশাল অংশ দখল করে নেয় আইএস। মসুলসহ বড় বড় শহরে শুরু হয় তাদের বর্বর শাসন। প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস করা হয়, নির্বিচার হত্যা করা হয় ভিন্নমতাবলম্বীদের, আর নারীদের ওপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় দাসপ্রথার নির্যাতন। মনে হচ্ছিল, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে হাজার বছরের সভ্যতা বুঝি চিরতরে হারিয়ে যাবে অন্ধকারের গহ্বরে।

আইএসকে পরাজিত করার পর ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজপথে পতাকা হাতে উল্লসিত ইরাকি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কিন্তু ইরাকের মানুষ হার মানেনি। টানা তিন বছর ধরে দেশটির সেনাবাহিনী, পেশমার্গা বাহিনী এবং সাধারণ জনগণ এক মরণপণ লড়াই চালিয়ে যায়। এই যুদ্ধ ছিল অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। মসুলের অলিগলিতে, রাক্কা বা তিকরিতের ধূসর প্রান্তরে ঝরেছে হাজারো ইরাকি জওয়ানের রক্ত। অবশেষে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি ঘোষণা করেন—ইরাকের মাটি সন্ত্রাসমুক্ত।

এই বিজয় কেবল একটি ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের বিজয় ছিল না; এটি ছিল উগ্রবাদের বিরুদ্ধে মানবতা ও সংস্কৃতির বিজয়। দিনটি এখন ইরাকে সরকারি ছুটির দিন। বাগদাদের আকাশে এই দিনে আতশবাজি ফোটে, রাস্তায় বের হয় বিজয় মিছিল। তবে উৎসবের পাশাপাশি ইরাকবাসী এই দিনে স্মরণ করে সেই শহীদদের, যাঁরা নিজের জীবন দিয়ে পৃথিবীকে এক ভয়াবহ অভিশাপ থেকে রক্ষা করেছেন।

বিশ্বমানচিত্রে ইরাক

বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সব ধরনের শোষণ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধেও ছিল। আমাদের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের মতোই ইরাকের ১০ ডিসেম্বরের এই বিজয় বিশ্বকে এ বার্তাই দেয়, সন্ত্রাস ও ঘৃণার সাম্রাজ্য যত শক্তিশালীই হোক না কেন, মানুষের শান্তির আকাঙ্ক্ষা ও সম্মিলিত সাহসের কাছে তা বালুচরের মতো ধসে পড়তে বাধ্য।