‘পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ফক্সওয়াগন গাড়ি পৌঁছাতে চাই’
তাঁরা গাড়িপ্রেমী। ভালোবাসেন পুরোনো গাড়ি সংগ্রহ করতে। বিশেষ করে ফক্সওয়াগন। এবার তাঁরা এক ছাতার নিচে একত্রিত হয়েছেন নিজেদের ফ্যান ক্লাব ‘ফক্সওয়াগন ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেড’–এর অধীনে। চলতি বছরের ৬ আগস্ট ক্লাবটি সরকারের অনুমোদন পায়। যদিও বাংলাদেশে ভিন্টেজ গাড়িপ্রেমীদের এ ফ্যান ক্লাব ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করেছিল।
সরকারের অনুমোদনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও নিজেদের নতুন লোগো উন্মোচন উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচল ক্লাবে একত্র হন ক্লাবের সদস্যরা। এ সময় কেক কেটে ফক্সওয়াগন ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী কমিটি এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠান ঘিরে রাজধানীর পূর্বাচল ক্লাব মাঠে ক্ল্যাসিক ও আধুনিক মডেলের ফক্সওয়াগন গাড়ির প্রদর্শনী করা হয়। ক্লাবের সদস্যরা এদিন আসেন নিজেদের বিভিন্ন মডেলের ফক্সওয়াগন গাড়ি নিয়ে। বিভিন্ন রং ও মডেলের ১০টির অধিক ফক্সওয়াগনের দেখা মেলে সেখানে।
ফক্সওয়াগন বিটল মডেলের একটি গাড়ি নিয়ে পূর্বাচল ক্লাব মাঠে আসেন জুবায়ের মঈন। ১৯৬৫ সালে জার্মানির তৈরি ১২০০ সিসির এ গাড়ি ছিল তাঁর দাদির কেনা। গাড়িটি সম্পর্কে জানতে চাইলে জুবায়ের মঈন প্রথম আলোকে বলেন, এ গাড়ি আমার দাদি কিনেছিলেন। এরপর আমার বাবা এটি চালিয়েছিলেন। এখন আমি চালাচ্ছি। গাড়িটিকে সচল রেখে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে চান বলেও জানান তিনি।
ফক্সওয়াগন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জুবায়ের মঈন বলেন, ‘ফক্সওয়াগন আসলে কেন ভালো লাগে, এটা বলতে পারব না, কেউই বলতে পারবে না, কেন ভালো লাগে। কিন্তু যখন ফক্সওয়াগনের চালকের আসনে বসি, তখন ভিন্ন রকম অনুভূতি হয়। ৬০ বছর ধরে গাড়িটি আমাকে সার্ভিস দিচ্ছে। এ গাড়িগুলো খুব বেশি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় না, একবার চলতে শুরু করলে অনেক বছর ভালো যায়।’
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে নিজের ফক্সওয়াগন গাড়ি চালিয়ে আসেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফক্সওয়াগন গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করাও একটি মজার বিষয়। আমাদের যাদের গাড়িগুলো আছে, আমরা নিজেরাই এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করি। এর বাইরে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুঁজে বের করাও একটি মজার বিষয়।’
ফক্সওয়াগন ক্লাবে একত্রিত হওয়ার কারণ জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এ ক্লাবটি করার অন্যতম কারণই হচ্ছে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এ গাড়িগুলো দেখে, এ গাড়িগুলো যেন বোঝে এবং গর্ববোধ করতে পারে যে তাদের প্রজন্মে এ গাড়িগুলো ছিল।’
ফক্সওয়াগন গাড়িগুলোকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে চান জানিয়ে কর্নেল (অব.) মো. নুরুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আসলে কেন ফক্সওয়াগন গাড়িগুলো পছন্দ করি বা সংগ্রহে রাখি, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে এতটুকু বলতে পারি, আমরা চাই এ গাড়িগুলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মেও থাকুক। আমাদের ছেলেমেয়েরা এ গাড়িগুলোকে এভাবে এগিয়ে নিয়ে যাক।’
গাড়িগুলো পুরোনো হলেও ফিটনেস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই জানিয়ে কর্নেল (অব.) মো. নুরুল কবির বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো হলেও আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, গাড়িগুলোর ফিটনেস শতভাগ ঠিক আছে। আমরা ফিটনেসের সব শর্ত পূরণ করেই গাড়িগুলোকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
ফক্সওয়াগন ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেডের সহসভাপতি ফাহিম আব্দুল্লাহ বাশার বলেন, ‘ফক্সওয়াগন গাড়িগুলো সচল রাখতে আমরা নানা রকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হই। আগে ধোলাইখাল এলাকায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছে না। গাড়িগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা এ ক্লাবে একত্র হয়েছি। আমরা গাড়ির প্রদর্শনী, র্যালিসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
ক্লাব উদ্বোধন
ফক্সওয়াগন গাড়িপ্রেমীদের জন্য সামাজিক ক্লাব হিসেবেও যাত্রা শুরু করল ‘ফক্সওয়াগন ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেড’। এ ক্লাব এখন থেকে সড়ক নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচিও করবে। সে জন্য বাংলাদেশে থাকা ভিনটেজ বিটলস, বাস, সেডান থেকে শুরু করে সর্বশেষ মডেল পর্যন্ত সব ফক্সওয়াগন মালিক এবং ভক্তদের ক্লাবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।