খাবার থাকুক নিরাপদে, আপনি থাকুন নিশ্চিন্তে

খাবার রাখার নিয়মকানুন নাহয় মানলেন। স্বাদের ক্ষেত্রেও নাহয় ছাড় দেওয়া হলো। কিন্তু পুষ্টিমান? সেটা তো মাথায় রাখতেই হবে
ছবি: ওয়ালটন

ব্যস্ত জীবনে এত সময় কোথায় যে রোজ তিনবেলা রান্না করে টাটকা খাবার সাজিয়ে দেবেন বাড়ির সবার সামনে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নির্ভর করতে হয় ফ্রিজের ওপর। কিন্তু এভাবে ফ্রিজে রেখে খাবার খাওয়া কি ঠিক? কোন খাবার কীভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে? এ নিয়ে কথা হয় পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহানের সঙ্গে। তিনি দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

ফ্রিজে কাঁচা খাবার ও রান্না করা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি ভিন্ন। এ দুই ধরনের খাবার ফ্রিজে আলাদা করে রাখা উচিত। আবার খুব বেশি খাবার একসঙ্গে না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে রাখতে পারেন। একসঙ্গে যদি বেশি খাবার রেখে দেন, তাহলে বের করে রান্নার আগে কাঁচা মাছ বা মাংস পুরোটাই ভিজিয়ে রাখতে হবে। আবার রান্না করা খাবার পুরোটাই জ্বাল দিতে হবে।

এতে করে খাবারের পুষ্টি ও স্বাদ দুটোই নষ্ট হয়। অবশ্যই ফ্রিজের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কমাবেন ও বাড়িয়ে দেবেন। ফ্রিজে খাবার যদি আপনি বাক্সে ভরে রাখতে অভ্যস্ত হন, সে ক্ষেত্রে বাক্সগুলোর মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখবেন। তাহলে ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারবে।

দুধ জ্বাল দিয়ে সাধারণত আমরা অনেক দিন ফ্রিজে রেখে দিই। কিন্তু জ্বাল দেওয়া দুধ ৪৮ ঘণ্টার বেশি না রাখাই ভালো। দুধ যদি সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে তা ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এ অবস্থায় সাত দিন পর্যন্ত দুধ ভালো থাকবে। অনেকেই আদা, পেঁয়াজ, রসুন বেটে ফ্রিজে রেখে দেন। পেঁয়াজবাটা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ, পেঁয়াজে দ্রুত পচন ধরে।

এতে খাবারে বিষক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। তবে আদা ও রসুনবাটা এক সপ্তাহ ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। অনেকেই সারা সপ্তাহ বা মাসের প্রয়োজনীয় ডিম একবারেই কিনে রাখেন। এটাও করা উচিত নয়। ডিম সাধারণত কম তাপমাত্রায় তিন দিন পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়। বাড়িতে বানানো ফলের জুস কখনোই ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়। কারণ, ফল কেটে রাখলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

একই কারণে জুস বানানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা খেয়ে নেওয়া ভালো। সবজি ফ্রিজে রাখার আগে তা ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকাতে দিন। শুকিয়ে যাওয়ার পর নেটের ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রাখুন। এতে করে সবজি অনেক দিন ভালো থাকবে। অনেকে মাসের পর মাস ডিপ ফ্রিজে মৌসুমি ফল–মূল রেখে দেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সংরক্ষণের নিয়মাবলি মেনে তারপর রাখতে হবে। তবে বেশি দিন রাখার ফলে ফলের স্বাদ এতটাই নষ্ট হয়ে যায় যে পরে আর রস বের করে খাওয়া ছাড়া মুখে তোলাই দায় হয়ে যায়।

খাবার রাখার নিয়মকানুন নাহয় মানলেন। স্বাদের ক্ষেত্রেও নাহয় ছাড় দেওয়া হলো। কিন্তু পুষ্টিমান? সেটা তো মাথায় রাখতেই হবে। কারণ, খাবারে যদি পুষ্টি না থাকে, তবে আর থাকল কী? পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান বলেন, ‘অনেকের ফ্রিজেই এক বছরের কোরবানি ঈদের মাংসের দেখা মেলে পরের বছর কোরবানি ঈদেও। আমের মৌসুম শেষ হওয়ার ছয় মাস পরও আম হাজির হয় প্লেটে। এভাবে দীর্ঘদিন রাখার ফলে খাবারের পুষ্টি তো নষ্ট হয়ই, সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যায়।’

ইশরাত জাহানের মতে, মাংস দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করাই যৌক্তিক। আর মাছ রাখা যেতে পারে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। তবে মাছের মাথাগুলো আরও দ্রুত রান্না করে ফেলা ভালো।

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে যেমন কিছু খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়, তেমনি কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় ঠান্ডা জায়গায়। আবার কোনো খাবার যদি আপনি জীবাণুসহ ফ্রিজে রাখেন, তাহলে ওই জীবাণুও খাবারে থেকেই যায়।

তাই ফ্রিজে রাখার আগেই দেখে নেবেন খাবারটা ঠিক আছে কি না। তা ছাড়া ফ্রিজে রাখার পর যদি কখনো কোনো খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদের পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে সেটা আর না খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান। ফ্রিজ আছে আপনার কাজটাকে সহজ করে তুলতে। তার মানে এই নয় যে পুষ্টিহীন ও মানহীন খাবার খেয়েই জীবন ধারণ করতে হবে।