ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে: হিন্দু মহাজোট

‘হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে’ আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের একটি অংশ
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

দেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্মূলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের একটি অংশ। তারা বলছে, প্রশাসন এই আইনের অপব্যবহার করে হিন্দু নির্যাতনের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে জাতীয় হিন্দু মহাজোট এ অভিযোগ তুলেছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিকালে মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরায় নির্মীয়মাণ দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, হত্যা, জরবদখল, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, জোর করে ধর্মান্তরিত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে তারা।

মানববন্ধনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, গ্রামগঞ্জে ধর্মীয় বক্তারা কীভাবে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করছেন।

তখন কী আমাদের ধর্ম অবমাননা হয় না? তখন প্রশাসন কোথায় থাকে, তাঁদের কেন আইনের আওতায় আনা হয় না? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু কি হিন্দুদের, ৫৭ ধারা শুধু কি আমাদের জন্য?

আইসিটি আইন পরিহার করার আহ্বান জানাই। কারণ, এই আইসিটি আইনের বেশির ভাগ ব্যবহার হচ্ছে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্মূল করার জন্য।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি আবার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককে এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, ‘দুর্গাপূজার আর এক মাসও বাকি নেই। ইতিমধ্যে সারা দেশে নির্মীয়মাণ প্রতিমা ভাঙচুর করা হচ্ছে। তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাস বলেন, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত, এখন ডিজিটালভাবেও নির্যাতিত ও নিপীড়িত। ৫৭ নামে যে ডিজিটাল আইন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এর বলি হচ্ছে হিন্দুরা। কারণে-অকারণে কীভাবে হিন্দুদের কণ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ রাখা যায়, সেই অভিপ্রায়ে ৫৭ ধারাকে অপব্যবহার করে নির্যাতনের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিঠু রঞ্জন দেব। মানববন্ধন শেষে হিন্দু মহাজোটের একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

দুর্গাপূজায় ৩ দিন সরকারি ছুটি দাবি
একই সময়ে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের আরেকটি অংশ। এই অংশের সভাপতি প্রভাস চন্দ্র রায়। আর মুখপাত্র ও নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি তিন দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করার দাবি জানিয়েছেন।

এ ছাড়া দুর্গাপূজায় প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দিরে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজাকালীন নিরাপত্তা জোরদার করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা যদি সবার জন্য সমান প্রয়োগ না হয়, তাহলে অবিলম্বে এ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণ না করা হলে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।