সড়কের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ে নতুন সফটওয়্যার হবে

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পরিবহন ও সেতু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিনছবি: প্রথম আলো

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। তিনি বলেন, সমন্বয়ের অভাব দূর করতে প্রতি সপ্তাহে একটি করে সমন্বয় সভার আয়োজন করা হবে। এ জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যারও তৈরি করা হবে। যেখানে নিয়মিত তথ্য দেওয়া হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী।

শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো একে অপরের সঙ্গে ঠিকভাবে সমন্বয় করছে না। সবাই নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কারও সঙ্গে কেউ সমন্বয় করতে চায় না। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতি সপ্তাহে একটি সমন্বয় সভা করব। এতে নতুন, চলমান ও ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা দেখতে পাবেন। তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে। এই সভায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি বিভাগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের অংশীজনেরা উপস্থিত থাকবেন।’

মইনউদ্দিন বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া পরিবহন বিভাগে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বড় প্রকল্প, পরিবহন ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।

বাস রুট রেশনালাইজেশন শুরু হচ্ছে শিগগিরই

ঢাকার পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বহুল প্রতীক্ষিত বাস রুট রেশনালাইজেশন খুব শিগগির চালু হচ্ছে জানিয়ে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, এখন যেহেতু দেশে রাজনৈতিক সরকার নেই, তাই কাজটি বাস্তবায়নে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। এটি বাস্তবায়নের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে হাইকোর্ট মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় আধুনিক সংকেত–ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এর দৃশ্যমান অগ্রগতি পাওয়া যাবে। সংকেত–ব্যবস্থা স্থাপন একটি বড় পরিকল্পনার অংশ। এরপর জেব্রা ক্রসিং, সড়কের মার্কিং, পথচারী পারাপারসহ নানা বিষয় যুক্ত করা হবে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো হবে। এর ফলে নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামানো এবং সংকেত অনুযায়ী চলাচল নিশ্চিত করা যাবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার অন্যান্য সড়কেও তা চালু করা হবে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে। এটি কার্যকর হলে এই যানবাহনগুলো নির্দিষ্ট রাস্তায় চলাচল করতে পারবে, সব রাস্তায় নয়।

প্রকল্প খরচে আসছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি

দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পে খরচের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটি টিম গঠন করছি, যারা সব প্রকল্পের খরচ যাচাই করবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা আনাই আমাদের লক্ষ্য।’

মইনউদ্দিন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ ও সেবা সংস্থার লাইন সরানোর কাজটি আগে নিশ্চিত করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে না। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি এখন করে জেলা প্রশাসন। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অন্য সংস্থা। এতে ঝামেলা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন এক ছাতার নিচে আনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি পরিকল্পনা দেবেন বলেও জানান তিনি।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণে পাঁচ হাজার কোটির বেশি টাকায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। পরিবেশ–প্রতিবেশের ওপর প্রভাব এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা লাভজনক হবে—এমন বিবেচনায় প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান, বিআরটিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনুপম সাহা, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন। রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোডের (আরআরআর) সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলামসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।