অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে ভূমিকা নিতে বললেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালিগালাজ ও অশালীন আচরণকে’ কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি শান্ত করতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিনকে ভূমিকা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি দায়িত্ব নেন, তাঁদের বোঝান। পরিস্থিতি শান্ত করে স্বাভাবিক পরিবেশে নিয়ে আসেন।’ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ কথা বলেন।

এর আগে ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের এজলাসে হট্টগোলের ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট ৫ জানুয়ারি আদালত অবমাননার স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে তাঁদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে ১৭ জানুয়ারি হাজির হতে নির্দেশ দেন। নিজেদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে আজ আদালতে উপস্থিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী ও আইনজীবী জুবায়ের ইসলাম।

তিন আইনজীবীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নূর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুরুতে তিন আইনজীবীর পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন ফকির দুই মাস সময়ের আরজি জানান।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘সেদিন যা ঘটেছে, তা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেক পড়াশোনা করেছি অবমাননার ওপর। এমন কোনো ঘটনা আমি পাইনি। সত্যতা আছে? আপনি অফিসার্স অব দ্য কোর্ট। আপনি যদি আদালতকে অবমাননা করেন, তাহলে বিচারপ্রার্থীদের কাছে কী বার্তা যাবে?’ আদালত মন্তব্য করেন, ‘আপনার ক্ল্যায়েন্টরা যা যা করতে যাচ্ছেন, সেটা আগুন নিয়ে খেলার মতো।’

আরও পড়ুন

আদালত বলেন, ‘সার্বিক অবস্থা কিন্তু ভালো নয়। এখানে অনেক প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি আছেন। অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করবেন। এগুলো চিন্তা করবেন। এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য অনেক কুচক্রী মহল ও অনেক ষড়যন্ত্রকারী আছে। এটি আপনার প্রতিষ্ঠান, আমার প্রতিষ্ঠান। এটি মনে রাখবেন।’

আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘এটা মাথায় আছে। একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।’

আদালত বলেন, ‘২৯ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির সময় রাখছি।’ তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘অনুগ্রহ করে সামনের মাসে (ফেব্রুয়ারি) রাখেন। এর মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

একপর্যায়ে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘একটি ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে।’ এরপর আদালত বলেন, ‘কোনো কোর্ট বর্জন করবেন না। সাধারণ নাগরিকদের ভুল বার্তা দেবেন না। ভুল বার্তা দিলে এই আদালত থাকবে না। শেষ পর্যন্ত দেখব। যদি যা হয়েছে আপনারা সেখানেই শেষ করতে চান, তা-ও দেখব। আদালতের ভাবমূর্তি মানে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি।’

আরও পড়ুন

এ সময় মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত রুল হয়েছে আমার (আইনজীবীর) বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল হয়নি।’ এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত অনেকেই সমস্বরে ‘ইয়েস’ বলে ওঠেন। আদালত বলেন, ‘এরা কি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য?’ একপর্যায়ে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘সরি মাই লর্ড। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সময় দেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘কোন কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে, যা দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত। সময় দেন, সভাপতি, সম্পাদক, বার কাউন্সিলের সদস্য আছেন, কথা বলি।’

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘সময় দিতে সম্মত আছি। বলছি, আগুন থামান। ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখছি। তাদের (তিন আইনজীবী) হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি না। প্রতিটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি, পর্যবেক্ষণ করব। এটি জুডিশিয়ারির অস্তিত্বের প্রশ্ন। এতে সমিতিরও ক্ষতি।’

শুনানির একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে ঘটা ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরাতে নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান। পরে আদালত আদেশ দেন। ভিডিও ফুটেজ অবিলম্বে সরাতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।