আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় নভেম্বরে ৪ জনের মৃত্যু: এমএসএফ

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নভেম্বর মাসে দেশে অন্তত চারজন নিহতের তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। এ ছাড়া বিভিন্ন হামলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের ১৩ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের ভাগনে। এ ছাড়া অন্য তিনজন বান্দরবানে একটি অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাঁরা হলেন কেএনএ (কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মি) সদস্য।

আজ শনিবার নভেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে এমএসএফ। বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে সংস্থাটি এ প্রতিবেদন করেছে। এতে বলা হয়, নভেম্বর মাসে ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) পরিচয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৯টি ঘটনায় ৪১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ জন নিহত ও ৪০৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। এসব ঘটনার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন আওয়ামী লীগ, ৩ জন বিএনপি এবং ১ জন জামায়াতে ইসলামের নেতা-কর্মী।

চলতি মাসে মাজার ও বাউলদের আখড়ায় আক্রমণ করার ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজার ও শেরপুর জেলার দুটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৩ জন আহত ও ১ জন নিহত হয়েছেন। আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া যশোরে মন্টু বাউলের আখড়া বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। নারায়ণগঞ্জে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া ও সংগৃহীত তথ্যের বরাত দিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ২২টি ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ২২টি ঘটনার মধ্যে প্রতিমা ও উপাসনালয় ভাঙচুর ও চুরির ঘটনা ১২টি, হিন্দু-মুসলিম প্রেমসংক্রান্ত বিবাদে এক কিশোর নিহত, একজন সাঁওতাল নারীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার, সম্পত্তি ও জমি দখলের চেষ্টা ও হামলার ৫টি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তির ৩টি ঘটনা ঘটেছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী নভেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ছোড়া গুলিতে ১ জন নিহত ও ৪ জন আহত এবং ভারত সীমান্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১ বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন

নভেম্বরে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকের ওপর হামলা ও নির্যাতনের তথ্য উঠে এসেছে এমএসএফের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, গত মাসে ৩২টি ঘটনায় ৩১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হামলা, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এমএসএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নভেম্বরে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে, যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনা এবং পরবর্তী সংঘাতে নভেম্বরে ৪টি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ১৯ জন সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।