ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে হলটির সাবেক প্রাধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ মাসুম ও ১৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের আদালতে তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন আসমা আক্তার মামলাটি করেন।
পিটিয়ে হত্যার এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা থাকায় এ মামলার তদন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদালত আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২৫ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার অপর ১৪ আসামি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, ফিরোজ কবির, ফজলে রাব্বি, ইয়ামুস জামান, আবদুস সামাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, আল হুসাইন সাজ্জাদ, ওয়াজিবুল আলম, আহসানউল্লাহ, রাশেদ কামাল অনিক, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান ও মো. সুলতান।
গত ২০ সেপ্টেম্বর তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন মো. জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, মো. মোত্তাকিন সাকিন, আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম। তাঁরা সবাই ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ছয় শিক্ষার্থীর সবাই বলেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। তোফাজ্জল সেদিন রাত আটটার দিকে হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাঁকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তিন ধাপে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধরে জড়িত। জবানবন্দিতে ওই ছয় শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করেছেন। আসামিরা বলেন, সেদিন অতিথিকক্ষে মারধরের পর রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক হল থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সেদিন রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২১ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ মাসুমকে সরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি হল প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতে শনাক্ত হওয়া আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ওই আট শিক্ষার্থীর হলের আসনও বাতিল করা হয়েছে।