প্রদর্শনীতে জুলাইয়ের আত্মত্যাগের চিত্র

ডেইলি স্টারে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য দেড় শতাধিক আলোকচিত্র, ভিডিও ও সংবাদ নিয়ে প্রদর্শনী আজ শনিবার শুরু হয়েছে।

ছবি: সাজিদ হোসেন

ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের জুলাইয়ের যে উত্তাল সময়, তার ছবি, ভিডিও এবং সংবাদ প্রতিদিনই ছিল সংবাদপত্রের পাতায় ও অনলাইনে। তিন মাস পার হলেও জুলাইয়ের নির্মমতা এখনো সবাইকে নাড়া দেয়। শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের স্মৃতিতে তরতাজা হয়ে ওঠে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার–এর সংবাদকর্মীদের তোলা এমন আলোকচিত্র, ভিডিও ও সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে শুরু হয়েছে এক প্রদর্শনী।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘৩৬ জুলাই: নির্ভীকদের অভিবাদন’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। ডেইলি স্টার–এ প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য দেড় শতাধিক আলোকচিত্র, ভিডিও ও সংবাদ নিয়ে প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীটি ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পাশাপাশি প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে আলোচনা অনুষ্ঠানে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলবেন সাংবাদিক, শিক্ষক, পোশাকশ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ডেইলি স্টার যেভাবে ৩৬ দিনের আন্দোলনকে কভার করেছে, সেসব ছবি, সংবাদ নিয়ে এই প্রদর্শনী। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি, তাঁদের স্মরণ করা এবং ডেইলি স্টার–এর পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই আয়োজন।

অনুষ্ঠানে ডেইলি স্টার–এর ভিডিও, ছবি ও সংবাদ নিয়ে তৈরি ‘দ্রোহের জুলাই: সংবাদে সংগ্রামে’ নামের একটি ডকুমেন্টারিও দেখানো হয়।

তরুণ আলোকচিত্রী তাহির জামান প্রিয় ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেন, যাঁরা আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা এখনো নিরাপদ নন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে, হম্বিতম্বি করছে, ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। ফ্যাসিস্টদের দোসরা যারা তৃণমূল পর্যায়ে আছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যেকের বিচার দাবি করেন এই মা। এ ছাড়া শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সমস্যাগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে আরও সংবাদ প্রত্যাশা করেন তিনি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে শহীদ হন মাহমুদুর রহমান (সৈকত)। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে ভাই আজ চিরতরে হারিয়ে গেছেন উল্লেখ করে বোন সাবরিনা আফরোজ বলেন, আর কোনো বৈষম্য, অরাজকতা যেন না হয়। শহীদদের রক্তের ওপর এই বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। শহীদদের সঙ্গে যেন বেইমানি করা না হয়। ভাইয়েরা কবরে রয়েছে, কিন্তু খুনি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

উত্তরায় আন্দোলনের সময় চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইমরান হোসেনের। তিনি বলেন, দেশের জন্য চোখ হারিয়েছেন, প্রয়োজনে আবারও লড়বেন। সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।

আন্দোলনে আহত ব্যক্তি এবং নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের অনেকে বক্তব্য দেন।

প্রদর্শনীর ছবি, সংবাদ, ভিডিও দেখে জুলাইয়ের সময়কার স্মৃতি ভেসে উঠছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, রক্তাক্ত জুলাই কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না। আগে স্বৈরাচার শব্দ উচ্চারণ করা যেত না। অনেক কিছু জোর দিয়ে বলা যেত না। শিক্ষার্থী, মানুষ, অভিভাবকেরা সেই সাহস জুগিয়েছেন।

সংবাদকর্মীদের ধন্যবাদ দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, তাঁরা প্রতিদিনের ইতিহাস তুলে এনেছেন। যাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা যদি এগুলো তুলে না আনতেন, অনেক কিছু হারিয়ে যেতে পারত।

প্রদর্শনী দেখতে এসে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, আগামী দিনে যখন ইতিহাস রচিত হবে, তখন এই প্রদর্শনীর উপাদানগুলো মূল্যবান নথি হিসেবে কাজ করবে।

প্রদর্শনীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের সময় সমন্বয়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, সব দলের মধ্যে এখন এক হওয়ার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট যেন তৈরি না হয়। এই সময়টা চ্যালেঞ্জিং, তাই সবাইকে এক থাকতে হবে।

প্রদর্শনীটি ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ছবি: সাজিদ হোসেন

এ ছাড়া প্রদর্শনীতে এসে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মা আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থী শ্যামলী সুলতানা, ইডেন কলেজের ছাত্রী শাহীনূর সুমি এবং তিতুমীর কলেজের ছাত্র নীরব হাসান সুজন।

প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন মিডিয়াস্টার লিমিটেড ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান ও ট্রান্সকম গ্রুপের হেড অব ট্রান্সফরমেশন যারেফ আয়াত হোসেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা প্রমুখ।