পাঠকের লেখা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও আমার প্রত্যাশা
‘জুলাই-কথা’ শিরোনামে পাঠকের কাছে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা চাওয়া হয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থান সময়ের অভিজ্ঞতা, আন্দোলন ঘিরে প্রত্যাশা ও আগামী বাংলাদেশের স্বপ্ন—এই তিন বিষয়ে পাঠকেরা লেখা পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে বাছাই করা এ লেখাটি প্রকাশিত হলো।
২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল রক্তে লেখা গণজাগরণের অধ্যায়, যেখানে ঘামের গন্ধে ভেজা রাজপথে তারুণ্য জেগেছিল। আমি ছিলাম সেই অসংখ্য মানুষের একজন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেবল প্রতিবাদ নয়, এটা ছিল আত্মার জাগরণ। ওই সময়ে মুক্ত পরিবেশে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ ছিল না।
সেদিন আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম প্রিয় মাতৃভূমিকে বাঁচাতে। তপ্ত রোদে রাজপথের মিছিলে আমার প্রথম স্লোগান দেওয়ার দিনটার কথা ভাবলে আজও শিহরণ জাগে। আমার হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না, ছিল কেবল সাহস আর দৃঢ়চেতা মনোবল। মিছিলে সহযাত্রী হিসেবে থাকা ভাইবোনের চোখে ছিল না ভয়। তাদের ক্ষিপ্র চোখে ছিল আগুন! আমাদের প্রতিটি স্লোগান, প্রতিটি পদক্ষেপ জানান দিচ্ছিল—‘বাংলাদেশ ঘুমিয়ে নেই’।
নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠির আঘাত, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস কিছুই থামাতে পারেনি আমাদের সেই অগ্নিযুগের পদচারণ। আমাদের আন্দোলন শুধু সরকারের বিরুদ্ধেই ছিল না, এটা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের বিদ্রোহ। আমরা চাইছিলাম এমন একটা দেশ, যেখানে সত্যিকার অর্থেই থাকবে ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার। যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি সোনালি ভবিষ্যৎ গড়বে। আমার প্রত্যাশা খুব বড় কিছু নয়—আমি শুধু চাই, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক হোক।
৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর অন্যদের মতো আমার প্রত্যাশাও বেড়েছে। আমি চাই নতুন মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের সমালোচনা করা যাবে। যেখানে শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা পাবে এবং সবাই ন্যায়বিচার পাবে। রাষ্ট্র যেন তার প্রতিটা নাগরিকের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনে। আমি চাই, বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচুক। যার যে বিশ্বাস, তা নিয়েই বেঁচে থাকুক।
আমি চাই আগামীর বাংলাদেশ হোক মানবিক, দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও পরমতসহিষ্ণু। বিভেদের বদলে হোক ঐক্য। আমরা যারা জুলাইয়ের যোদ্ধা হয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলাম, তারা শুধু সরকারের পতন নয়, একটি নতুন বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সবশেষে বলি, আমাদের প্রত্যাশা হলো—যে দল ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাবে, তারা যেন নতুন করে ফ্যাসিস্ট ও রক্তপিপাসু না হয়। তারা যেন অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সবার বাংলাদেশ গড়ে তোলে।