আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বাসস

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘খেলা হবে।’ আজ বুধবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ‘খেলা বন্ধ’ করার জন্য ওবায়দুল কাদেরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার পাল্টা জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খেলা হবে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।

কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। নির্বাচনেও এটি ব্যবহার করা হয়। কলকাতা হয়ে ‘খেলা হবে’ এখন দেশের সংসদে।

আজ সংসদের বৈঠকের শেষ পর্যায়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়ান হারুনুর রশীদ। তিনি বিআরটি প্রকল্পের কারণে এয়ারপোর্ট সড়কের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, জনদুর্ভোগ থেকে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। দেশ এখন জনদুর্ভোগের দেশে পরিণত হয়েছে। এ জন-অসন্তোষকে লাঘব করার জন্য সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না।

সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশে হারুন বলেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রী প্রায়ই বলছেন “খেলা হবে”। আগামী ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। আমরা এমন খেলা দেখতে চাচ্ছি না যে জনদুর্ভোগে মানুষ পড়েন। এ দেশে দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ—এগুলো নিয়ে কয়েক মাস যাবৎ বিএনপি সভা-সমাবেশ করছে। আপনি কেন পরিবহন বন্ধ করছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে বলেন, “কী কারণে পরিবহন বন্ধ হয়েছে, বলতে পারব না।” দেশ চালাচ্ছেন কেন আপনারা? একটা নয়, দুটো নয়, একের পর এক।’

হারুনুর রশীদ আরও বলেন, ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ হবে। লঞ্চ, বাস, থ্রি-হুইলার, ট্রেন—সবকিছু বন্ধ। এতে যে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, তা কল্পনা করা যায় না।

সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘জনদুর্ভোগ আর বাড়ায়েন না। জনদুর্ভোগে যে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, তাতে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে।’ হারুন আরও বলেন, ‘সরকারকে বলব, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরে আসুন। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলকে যে সভা-সমাবেশ করতে দেন না, সেই জায়গায় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। আমি মনে করি, খেলা বন্ধ করুন। খেলা বন্ধ করে সত্যিকার অর্থে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’

এরপর হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিরোধী দল হলেই বিরোধিতার খতিয়ে বিরোধিতা করা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, মেট্রোরেল সামনে হচ্ছে। এলিভেটেড এগিয়ে গেছে। কর্ণফুলী টানেল রেডি। কী চান আর? একটা সরকার, এতগুলো প্রজেক্ট। যেদিকে তাকান ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস-ওভারপাস। আপনাদের সময় কী ছিল? জিরো। ওই জিরোর বিরুদ্ধে খেলা হবে। ওই জিরো যে করছেন! ভোগান্তিতে রাখছেন লাখো কোটি মানুষকে। সেটিই খেলা হবে।’

ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পের কারণে ভোগান্তির কথা স্বীকার করে সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটিতে নকশায় ত্রুটি ছিল। এ কারণে সমস্যা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে হারুনুর রশীদের অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাস ধর্মঘট কেন হয়েছে, শিমুল বিশ্বাসকে (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) জিগ্যেস করুন। কেন মন্ত্রী বলবে? সে পরিবহনের নেতা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেক্রেটারি বাসদ। প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগ (শাজাহান খান)। আর মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট রাঙা, জাতীয় পার্টি। সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ—এনায়েত। ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের শিমুল বিশ্বাস। সে কোন দলের? সে একটা স্টেটমেন্ট দেয় না কেন? সে কি বিএনপি নাকি অন্য কোনো দলের? আপনাদের দলের নেতা। তাঁকে জিগ্যেস করেন।’

এ সময় হারুন হাসতে থাকেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হাসেন কেন? আগুনে বাস পোড়ায়ছে তো? আগুনে বাস পোড়ালে ভালো লাগে। বাসওয়ালারা এখন আর বিশ্বাস করে না। এরা বিএনপিকে দেখলেই মনে করে আগুন নিয়ে আসছে। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে পেট্রল বোমা। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে ককটেল।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খেলা হবে। এর বিরুদ্ধেই খেলা হবে। খেলা হবে। আমি বলছি খেলা হবে খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে। খারাপ কী বলেছি?’