বিসর্জনে শেষ দুর্গোৎসব

দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে এসেছেন হাজারো ভক্ত। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে
ছবি: জুয়েল শীল

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দশমী তিথিতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা ফিরে গেছেন কৈলাসে স্বামীর বাড়ি।

জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছিল গজে (হাতি) চড়ে। ফিরলেন নৌকায় চড়ে। হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ শুভ। আর নৌকায় চড়ে বিদায়ের অর্থ শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী।

গতকাল সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয় দেবীকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। এবারের দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল ১ অক্টোবর, ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় ‘আনন্দময়ীর’ নিদ্রাভঙ্গের বন্দনার মাধ্যমে।

সরকারি ছুটি থাকায় গতকাল রাজধানীর রাস্তায় তুলনামূলক মানুষ কম ছিল। তবে ভিড় ছিল পূজামণ্ডপে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই দেবীর আশীর্বাদ লাভের আশায় মণ্ডপে মণ্ডপে যান।

রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের (সসকস) পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা সিঁদুর আর অঞ্জলির প্লেট হাতে মঞ্চে গিয়ে দেবীকে প্রণাম করে পায়ে সিঁদুর মাখিয়ে দিচ্ছেন। মঞ্চ থেকে নেমে একে অন্যের কপালে ও গালে সিঁদুর মাখাচ্ছেন।

মণ্ডপে আসা সুমিত্রা বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের আয়োজন সব মিলিয়ে খুব ভালো হয়েছে। দেবী মায়ের কাছে সবার জন্য মঙ্গল কামনা করেছি।’ পাশে তখন ঢাকের তালে তালে নাচছিলেন নানা বয়সের নারী ও পুরুষ।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, গত দুই বছরে করোনা মহামারির বিবর্ণ সময়ে উৎসব আয়োজনে ছিল নানা সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে গত বছরের দুর্গাপূজায় কুমিল্লার সহিংসতাকে ঘিরে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা ছিল। তবে এবারের আয়োজন জমজমাট ও উৎসবমুখর হয়েছে।

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মণ্ডপের প্রতিমা খোলা ট্রাকে ওঠানো হয় বেলা পৌনে দুইটার দিকে। মণ্ডপ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অনেক ভক্ত বিজয়া শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

দেবী দুর্গাকে নিয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রার আগে গতকাল রাজধানীর অন্যান্য মণ্ডপ ও মন্দিরের চিত্রও ছিল একই। প্রথমে দশমীর বিহিত পূজার আনুষ্ঠানিকতা হয়। এরপর দেবীর দর্পণ বিসর্জন।

দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি ও ঢাকের বাদ্যে মন্দিরে ছিল উৎসবের আবহ। এখানে কথা হয় মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি নির্মল কুমার চ্যাটার্জির সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনার পর এবারই উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের মধ্যে দুর্গাপূজা হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এবার দুর্গাপূজার ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপ হয়েছে। ঢাকা মহানগরে দুর্গামণ্ডপ ছিল ২৪২টি।

রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপের বিজয়া শোভাযাত্রা বিকেল চারটার দিকে পলাশী এলাকায় জড়ো হয়। সেখান থেকে ছোট–বড় ১১০টি ট্রাকে শোভাযাত্রা করে সদরঘাটের ওয়াইজঘাট এলাকায় বিসর্জনের জন্য যাওয়া হয়। সদরঘাটে এ শোভাযাত্রা পৌঁছায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে।

এ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট ৩৫ মিনিটে ৩০০ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বেলা তিনটার দিকে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, ঈদগাঁও, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং শহরের বিভিন্ন মণ্ডপের বিজয়া শোভাযাত্রা সৈকতে পৌঁছায়।