রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে জরিপ করে সিপিডি: কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক
ফাইল ছবি

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, সিপিডি রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে অনেক জরিপ করে। তারা একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে চায়। সিপিডি সেই দলের অংশীদার। এর আগেও ড. ইউনূসকে নিয়ে সিপিডি জোরেশোরে মাঠে নেমেছিল। তখন জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।

তবে কৃষিমন্ত্রীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিডি বলেছে, সংস্থাটি রাজনীতি করে না। কৃষিমন্ত্রীর এমন বক্তব্য হাস্যকর ও অমূলক। আর তথ্য–উপাত্তসহকারে যুক্তি দিয়ে বক্তব্য না দিয়ে ভিত্তিহীন দুর্নাম উপকারী পদক্ষেপ নয়।

সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির অগ্রগতিসংক্রান্ত সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

‘দেশে ব্যবসায়ে বড় বাধা দুর্নীতি’ সিপিডির সাম্প্রতিক জরিপের এমন ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, তাদের জরিপপদ্ধতি মানুষকে জানানো দরকার। কী পদ্ধতিতে, কতটা বস্তুনিষ্ঠভাবে সংস্থাটি জরিপ করেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আর সিপিডি ধোয়া তুলসী পাতা নয়, নিরপেক্ষও নয়।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারতের মতো দেশেও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, এটিকে সিপিডি কীভাবে দেখে? এ অর্জন কী জাদুবলে হয়েছে? বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, দেশে এখন প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৬ ভাগ। সিপিডি কি জানে মূল্যবৃদ্ধির কারণে টনপ্রতি ২৫০ ডলারের পটাশিয়াম সার কীভাবে আমরা ১ হাজার ২০০ ডলারে কিনে কৃষকদের ভর্তুকিতে দিয়েছি।’

উন্নত দেশসহ সারা বিশ্বেই কমবেশি দুর্নীতি রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো দেশেও দুর্নীতির অনেক নজির রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও কিছুটা দুর্নীতি আছে। খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় জেল খাটছেন। দেশ থেকে দুর্নীতি একেবারে নির্মূল হয়ে গেছে—তা বলা যাবে না।

কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, সিপিডি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো বক্তব্য দেয়নি। তথ্য–উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বক্তব্য দেয় সিপিডি। ২১ বছর ধরে তারা এ জরিপ করে আসছে। প্রতিবারই তাদের সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। জরিপের এমন ফলাফলের মাধ্যমে সরকারের যেকোনো ধরনের কার্যক্রম গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কৃষিমন্ত্রীর এমন বক্তব্য হাস্যকর ও অমূলক। তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে জরিপের ফল প্রকাশ করেছে সিপিডি। সরকার চাইলে এর বিপরীতে তথ্য–উপাত্ত দিয়ে যুক্তি দিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। এসব না করে কাউকে নিয়ে ভিত্তিহীন দুর্নাম করা উপকারী পদক্ষেপ নয়।