স্বপ্নপূরণ তোমাদের হাত ধরে

সনদ ও ক্রেস্ট হাতে কৃতী শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। গতকাল নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল নগর পার্কে
ছবি: দিনার মাহমুদ

যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইছি, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন তোমাদের হাত ধরেই হবে। নিজেদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য।

নারায়ণগঞ্জে গতকাল শুক্রবার শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অতিথিরা। শহরের জিমখানায় শেখ রাসেল পার্ক খেলার মাঠে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গতকাল নরসিংদীতেও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে নয়টায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে ছিল নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, সংগীত ও মূকাভিনয় পরিবেশন। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় দুই হাজারের বেশি কৃতী শিক্ষার্থী।

জাতীয় সংগীতের সময় শিক্ষার্থী ও অতিথিরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। গতকাল সকালে নরসিংদী সরকারি কলেজের মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমরা যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইছি, যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নটা তোমাদের হাত ধরেই হবে। তোমরা অবশ্যই সততা ও সাহসের সঙ্গে দেশকে ভালোবেসে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, সে প্রত্যাশা রইল।’

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর বলেন, নিজেকে শুধু মেধাবী হিসেবে নয়, আলোকিত ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থ, মাদককে ‘না’ বলার শপথবাক্য পাঠ করান প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, জীবনে জিপিএ-৫ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জিপিএ-৫ না পেলে জীবন শেষ হয়ে যায় না, মানুষের জীবনে অনেক পথ খোলা থাকে। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের বাইরেও তোমাদের অন্য বই পড়তে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। ক্লাসের বাইরেও বিরাট একটি পৃথিবী আছে, সেই পৃথিবীতে তোমাদের চরে বেড়াতে হবে।’

নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে আফসানা মিমি। সে বলল, ‘এত বড় পরিসরে সংবর্ধনা পাওয়ার মজাই আলাদা। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত।’

প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মনিকা আক্তার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রণদাপ্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিন নাজমুল হাসান, নারায়ণগঞ্জ কলেজের উপাধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজাসহ নারায়ণগঞ্জের সুধীজনেরা। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে অর্চনা একাডেমি, মূকাভিনয় করেন প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা। এ ছাড়া কৃতী শিক্ষার্থীরা সংগীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করে।

অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট, সনদ, নাশতা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছিল প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) বিনা মূল্যে সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স।

‘চূড়ান্ত সফল হওয়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে’

নরসিংদীতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় নরসিংদী সরকারি কলেজের মাঠে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

নরসিংদীর অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে স্থানীয় ওয়ার ব্যান্ড। এ ছাড়া ছিল নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি। কৃতী শিক্ষার্থীরাও এসব পরিবেশনায় অংশ নেয়। এর ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন অতিথিরা।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, ‘এসএসসিতে ভালো ফল করে তোমরা জীবনের প্রথম ধাপ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করলে। সামনের দিনগুলোতে সব রকমের বাধা মোকাবিলা করে জীবনে চূড়ান্ত সফল হওয়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’

নরসিংদী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. সিরাজ উদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, ‘ভালো ফলের পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ হওয়ার অনুশীলন তোমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের কাছ থেকে পেয়েছ অনেক, এবার দেশকে দেওয়ার জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু নিজের স্বার্থ নয়, পরিবার ও চারপাশের মানুষের জন্য নিজেকে তৈরি করো। তাহলেই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ, মিথ্যা ও মাদককে না বলার শপথ পাঠ করান প্রথম আলোর হেড অব মার্কেটিং মো. আজওয়াজ খান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা মিয়া, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, শিউলীবাগ বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ রায়হানা সরকার, মুক্তধারা নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি জহির মৃধা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নরসিংদী বন্ধুসভার সভাপতি প্রলয় জামান ও সাহিদা তাসফির।

শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর আয়োজনে দেশের ৬৪টি জেলায় কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।