ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় উদ্‌যাপিত মহাসপ্তমী

দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর দিনে বনানী পূজামণ্ডপে ঢাকঢোল বাজাচ্ছেন ঢাকিরাছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা, দেবীর পূজা ও ভক্তদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্‌যাপিত হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। এদিন ছিল বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় এ দুর্গোৎসব শুরু হয়।

গতকাল সারা দেশের মণ্ডপে মণ্ডপে প্রথম দিনের মতোই ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের খবর জানান দেওয়া হয়। পুরোহিতের পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, ভক্তদের আরতি, প্রার্থনা আর পুষ্পাঞ্জলিতে মণ্ডপগুলো ছিল ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ।

গতকাল বিকেলে ঢাকার বনানীর মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, পূজা আয়োজন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মাঠের বাইরে ও ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। প্যান্ডেলের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিমা দেখতে যাওয়া ভক্তদের প্যান্ডেলে যেতে হচ্ছে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে।

আর পূজামণ্ডপের জন্য করা প্যান্ডেলের ভেতরে ঢাকঢোলের তালে কাঁসর ও ঘণ্টা বাজানো হচ্ছে। দেবীর সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নত করে ভক্তরা প্রণাম করছেন। অনেকে হাত জোড় করে প্রার্থনা করছেন। প্রার্থনা শেষে পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নিচ্ছেন কেউ কেউ।

পুরান ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বনানীতে এসেছেন অশোক বিশ্বাস। সঙ্গে দুই সন্তান ও স্ত্রী। দেবীকে প্রণাম করে তাঁরা পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নিলেন। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাই যে মিলেমিশে আনন্দে এই দেশে বাস করতে পারি, এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি। আমাদের এই দেশ আরও সুন্দর হোক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে উঠুক। সবাই নিজ নিজ ধর্ম নির্ভয়ে চর্চা করতে পারুক।’ বনানীতে আসার আগে তিনি ঢাকেশ্বরী ও রমনা কালীমন্দিরে গিয়েছেন বলে জানালেন।

অন্যদিকে প্যান্ডেলের বাইরে দেখা গেল উৎসবমুখর পরিবেশ। মানুষেরা দলে দলে মণ্ডপে যাচ্ছিলেন। কারও সঙ্গে পরিবার-স্বজন, কেউ আবার বন্ধুবান্ধব মিলে প্রতিমা দেখতে এসেছেন। এ সময় পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হলে নমস্কার জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় সেরে নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে কেউ ছবি, কেউ সেলফি তুলছিলেন।

মহাসপ্তমীর আয়োজন নিয়ে বনানী পূজামণ্ডপের পুরোহিত পণ্ডিত সুনীল চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নবপত্রিকা প্রবেশ করানো হয়। এ সময় দেবী দুর্গাকে স্নানের মাধ্যমে মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়। পরে সপ্তমী বিহিত পূজা শেষে ভক্তরা মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন।

সুনীল চক্রবর্তী আরও বলেন, মায়ের কাছে সবারই চাওয়া আগামী এক বছর যেন পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে, আনন্দে থাকতে পারে। যাতে কোনো প্রকার আপদ-বিপদ না আসে, দুর্ঘটনা না ঘটে। তবে এ বছর ভোরে পূজার সময় হওয়ায় দেবীকে ভক্তরা আরাধনা করার সময় কম পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

বিকেলে বনানী মণ্ডপ পরিদর্শনে যান ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হাসান। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তাবলয় নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের আশঙ্কা, ভয় ও চ্যালেঞ্জ নেই। এ দেশ সবার। এখানে সবার সমান সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।

এ দেশ ঐতিহ্যগতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেনি, এটা আমি বলব না। সব সময় বলে আসছি, যারা উপাসনালয়ে হামলা চালায়, যারা অন্যান্য ধর্মের বাড়ি নষ্ট করে দেয়, অনেক সময় এগুলো রাজনৈতিক কারণে হয়। ক্ষমতার যখন পালাবদল ঘটে, তখন এক দল অপর দলের ঘরে হামলা চালায়। এটা চালানো উচিত নয়।’

অনেক সময় ভুল-বোঝাবুঝি ও গুজব তৈরির মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করা হয় জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা নিজ নিজ ধর্ম পালন, ধর্মীয় অনুশীলন চর্চা করবেন। কোনো আশঙ্কা করলে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে, স্থানীয় থানায় জানাবেন। সে যে দলের হোক, যে মতের হোক, আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হবে।’ অতীতেও যারা উপাসনালয়ে হামলা করেছে, ওই অপরাধীদের ধরে এনে বিচার করতে হবে বলেও জানান তিনি।

হৃদয়কে বড় করার আহ্বান জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মুসলমানের যেমন ধর্ম উপদেষ্টা, আমি হিন্দুরও, বৌদ্ধেরও, খ্রিষ্টানেরও ধর্ম উপদেষ্টা।’