বিবিসি বাংলা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন

জেনারেল এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে বিবিসি বাংলা দুবার আক্রমণের মুখে পড়ে। কারণ, এটি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী কর্মসূচির খবর তুলে ধরত।

  • ১৯৯০ সালে উত্তাল এবং রক্তাক্ত সপ্তাহে যখন সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে ৭০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছিলেন, বিবিসি বাংলা সার্ভিস বাংলাদেশের উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ৩০টির বেশি প্রতিবেদন সম্প্রচার করেছিল।

নব্বইয়ের গণ–আন্দোলনে পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন নূর হোসেন
ছবি: পাভেল রহমান

আমরা যারা আশির দশকে বিবিসির বাংলা খবর ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনে বড় হয়েছি, তাদের জন্য বিবিসির বাংলা সার্ভিসের সম্প্রচার বন্ধ হওয়ার খবর বেদনাদায়ক। আমি তখন বার্তা সংস্থা ইউএনবির সাংবাদিক এবং ১৯৯২-১৯৯৭ সালে সাংবাদিকতায় পিএইচডি করার সময় অনেকবারই বিবিসির লন্ডনের বুশ হাউসে গিয়েছি। বিবিসির ক্যানটিনের খাবারদাবারের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। সেই ক্যানটিনে অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি আমার গবেষণার জন্য।

আমার সেই গবেষণার কিছু নির্বাচিত অংশ প্রথম আলোর পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরছি। কলেবর বাড়বে বলে গবেষণা-সংশ্লিষ্ট তথ্য–সূত্রের বিবরণ দেওয়া হলো না।

মুক্তিযুদ্ধদের সময় পাকিস্তানি হানাদার সরকার এই বলে সতর্ক করেছিল যে কেউ বিবিসি শুনলে বা তাদের তথ্য পাঠালে দুই বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিবিসির সংবাদের জনপ্রিয়তা একজন বাঙালি ব্যবসায়ীকে পাকশী-রূপপুরে একটি বিবিসি বাজার স্থাপন করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যেখানে গ্রামবাসী যুদ্ধের সর্বশেষ খবর শোনার জন্য জড়ো হতেন। বিবিসির একজন সংবাদদাতা, নিজামউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতেই নিহত হন।

জেনারেল এরশাদের শাসনামলে বিবিসি বাংলা

জেনারেল এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে বিবিসি দুবার আক্রমণের মুখে পড়ে। কারণ, এটি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী কর্মসূচির খবর তুলে ধরত। এরশাদ সরকার ১৯৮৭ সালে বিবিসি সংবাদদাতা ফিল জোনসকে ‘আপত্তিকর প্রতিবেদন’ প্রচারের জন্য বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করে। এর আগে কর্তৃপক্ষের কোপানলে পড়েন বিবিসি ঢাকার সংবাদদাতা আতাউস সামাদ, যিনি ‘চিফ অব স্টাফের জন্য ক্ষতিকারক’ বলে বিবেচিত প্রতিবেদনের জন্য গ্রেপ্তার হন। সরকারের এই পদক্ষেপ লন্ডনে বিবিসি বাংলা সার্ভিসকে একটি সমস্যায় ফেলে দেয়। কারণ, অকুস্থলে সংবাদদাতা ছাড়া তথ্য সংগ্রহ করতে তাদের অসুবিধা হচ্ছিল।

১৯৮৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন, কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমের সংবাদ এবং প্রতিবেদনের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে। স্বাভাবিক টেলিযোগাযোগ পরিষেবা পুনরায় চালু হলে বিবিসির অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ভয়েস সাক্ষাৎকার এবং সরকারের মতামত সম্প্রচার করা হয়, যা শ্রোতাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সহায়তা করে।

এই সময় বিবিসি বাংলা সার্ভিস বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সম্প্রচার অব্যাহত রাখায় জেনারেল এরশাদ সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একটি সংবাদ সম্মেলনে একজন প্রতিবেদক এরশাদকে বিবিসির একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য করতে বলেছিলেন, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করা হয়েছিল। এরশাদ রসিকতা করে বলেছিলেন যে বিবিসি হলো ‘বিরোধী ব্রডকাস্টিং করপোরেশন’, অর্থাৎ বিরোধী দলগুলোর রেডিও স্টেশন।

এরশাদের সামরিক সরকারের সময় বিবিসির কভারেজ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ ছিল। সরকারনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিরোধী দলগুলোর হরতালের খবর প্রচার করা হতো না। সংবাদপত্রগুলোকে ‘হরতাল’ শব্দটি ব্যবহার এড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা এটিকে ‘ক্রিয়াকলাপ’ শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতার সরকার-অনুপ্রাণিত সংবাদ প্রচার করে দাবি করে যে ধর্মঘটের সময় রাজধানী ও দেশে জীবন স্বাভাবিক ছিল, বিপরীত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও।

ঢাকায় সংবাদদাতা না থাকলেও বিবিসি বাংলা সার্ভিস চার মাস ধরে প্রতিবেদন প্রচার করতে থাকে। এরপর বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সংকেত আসে যে এরশাদ প্রশাসন বিবিসির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইচ্ছুক। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকায় যান এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর বিবিসির সংবাদদাতা আতাউস সামাদকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এরশাদ সরকারের চাপ সহ্য করে বিবিসি বাংলা সার্ভিসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য খবর ছিল ১৯৮৬ সালে, যখন লন্ডনের দ্য অবজারভার একটি আলোচিত প্রতিবেদনে দুর্নীতি এবং এরশাদের গোপন এক বিয়ের খবর প্রকাশ করে। নিবন্ধের গবেষক চাপের প্রকৃতি শনাক্ত করতে বিবিসি বাংলা সার্ভিসের দুটি সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন। একজন প্রযোজক সামরিক সরকারের চাপের কথা অস্বীকার করেন। অন্য একটি সূত্র কিছু চাপের কথা বললেও তার প্রকৃতি বর্ণনা থেকে বিরত ছিলেন। একটি ভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ের খবর সম্প্রচার না করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বিবিসি তার নিজস্ব প্রতিবেদন দাখিল করার পরিবর্তে প্রেস রিপোর্টের বরাত দিয়ে খবরটি পরিবেশন করে।

এক জেনারেলের কাছে বিবিসির ক্ষমা প্রার্থনা

১৯৮৭ সালে বিবিসি বাংলা সার্ভিস তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আতিক রহমানের কাছে ‘অযোগ্য’ শব্দের অনুবাদে ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। বিবিসির সংবাদদাতা মার্ক টালি নয়াদিল্লি থেকে একটি প্রতিবেদনে বলেন, জেনারেল আতিক অনিরাময়যোগ্য এক রোগে ভুগছেন এবং তিনি দায়িত্ব পালনের জন্য ‘অযোগ্য’। ‘আনফিট’ শব্দটিকে ভুল করে বাংলায় ‘অযোগ্য’ অনুবাদ করা হয়েছে। জেনারেল আতিক খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে বিবিসির ঢাকা প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিবিসি বাংলা সার্ভিস এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে।

১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান

১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস আন্দোলনের সময়ও বিবিসি বাংলা সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলা সার্ভিসের উপপ্রধান সিরাজুর রহমান বিবিসি বাংলা সার্ভিসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করতে ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন জোরদার হয়। এরশাদ জরুরি অবস্থা ঘোষণার এক দিন আগে সিরাজুর রহমান একটি রিপোর্ট পাঠান যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চেকোস্লোভাকিয়া এবং পূর্ব জার্মানির পরিস্থিতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের পক্ষে জনমতের পরিবেশ বিরাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর কঠোর বিধিনিষেধ এবং প্রাক্‌-সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার এড়াতে বিবিসির সংবাদদাতা আতাউস সামাদ আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ঘটনাগুলোর রিপোর্ট করতে শুরু করেছিলেন। আতাউস সামাদ এই গবেষককে জানান, তাঁর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি রেডিও বার্তা শুনেছিলেন, যেখানে সামাদকে যেকোনো বিক্ষোভ এবং জনসভার জায়গায় দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই জীবনের ভয়ে আতাউস সামাদ আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।

১৯৯০ সালের নভেম্বরে জরুরি শাসন জারির পর সংবাদপত্রের সাংবাদিকেরা রাজনৈতিক প্রতিবেদনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে। এমনকি সরকারি সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকেরাও তাঁদের সহকর্মীদের দাবির সমর্থনে কাজ বন্ধ করে দেন। সেই উত্তাল সপ্তাহগুলোতে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি।

১৯৯০ সালে উত্তাল এবং রক্তাক্ত সপ্তাহে যখন সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে ৭০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছিলেন, বিবিসি বাংলা সার্ভিস বাংলাদেশের উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ৩০টির বেশি প্রতিবেদন সম্প্রচার করেছিল।

বিবিসি বাংলা সার্ভিস সে সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের তীব্র প্রতিক্রিয়ার প্রতিবেদনও প্রচার করে। ডাউনিং স্ট্রিট স্পষ্ট করে বলে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলতে না দিলে বাংলাদেশে ব্রিটিশ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই বিবৃতিটি ব্রিটিশ হাইকমিশনার কলিন ইমরে ব্রিটিশ সহায়তা প্রকল্পের অধীনে নির্মিত দুটি সড়ক সেতুর উদ্বোধনের সময় দিয়েছিলেন এবং সরকার–নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) দ্বারা সম্পূর্ণ সেন্সর করা হয়েছিল, তবে বিবিসি বাংলা সার্ভিস তা সম্প্রচার করেছিল। বিবিসি আরও জানায়, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর রাষ্ট্রপতি এরশাদকে এই মর্মে সতর্ক করেছিল যে বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তারা বাংলাদেশে সহায়তার নীতিতে পরিবর্তনের বিষয়ে বিবেচনা করবে। এই খবর বিরোধীদের ধারণা দেয় যে এরশাদ আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছেন, যা গণতন্ত্রের জন্য তাদের সংগ্রামকে বেগবান করতে অনুপ্রাণিত করে।

চাপের মুখে রাষ্ট্রপতি এরশাদ দেশব্যাপী একটি সম্প্রচারে ঘোষণা করেন যে তিনি ১৫ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন। বিবিসির বাংলা সার্ভিস আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং ড. কামাল হোসেনের প্রতিক্রিয়া সম্প্রচার করে। তাঁরা এরশাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত পদত্যাগ দাবি করেছিলেন।

এরশাদের ক্ষমতা ছাড়ার খবর বিটিভি প্রচার করলেও খুব কম মানুষই তা দেখেছিল। ঢাকায় এএফপি ব্যুরোই প্রথম এরশাদের পতনের খবর প্রকাশ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই বিবিসি বাংলা সার্ভিস খবরটি প্রচার করে। এরশাদের পতনের খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ আনন্দ উদ্‌যাপনে রাস্তায় নেমে আসেন।

পদত্যাগের পর বিবিসিতে এরশাদের সাক্ষাৎকার

দুই দিন পর তিনটি রাজনৈতিক জোটের যৌথ ঘোষণায় প্রস্তাবিত একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। জেনারেল এরশাদকে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দী করা হয় এবং পরে রাজধানীর একটি উচ্চবিত্ত এলাকা গুলশানের একটি কড়া সুরক্ষিত ভিলায় স্থানান্তরিত করা হয়। এই বন্দিত্বের সময় জেনারেল এরশাদ বিবিসির হামফ্রে হাক্সলিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাঁর কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছাও ঘোষণা করেছেন।

এরশাদের সাক্ষাৎকারটি ৯ ডিসেম্বর সম্প্রচারিত হলে ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাঁরা পতিত স্বৈরশাসকের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পরিস্থিতি এতটাই উত্তাল হয়ে ওঠে যে সশস্ত্র ছাত্ররা সেনা সদর দপ্তরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এরশাদকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি শান্ত হয়। তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারের চার দিন পর ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে অবশেষে গ্রেপ্তার হন এরশাদ।

শেষের আগে

বিবিসি বাংলা সার্ভিসের পক্ষে বাঙালি শ্রোতাদের মধ্যে ভালোবাসা সব সময় প্রবল ছিল। এটির একটি ব্যাখ্যা হলো, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিবিসি বাংলা সার্ভিসের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন। তা ছাড়া বিবিসির ঢাকা সংবাদদাতাদের সম্পর্কে শ্রোতাদের মধ্যে একটি অনুকূল ভাবমূর্তি ছিল, যা জনপ্রিয়তা অর্জনে সহায়তা করেছিল। তবে বিবিসি বাংলা সার্ভিসের সংবাদের সর্বজনীন বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে।

বিবিসি বাংলা সার্ভিস ১৯৯০ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনার ব্যাপক কাভারেজ না দিলে তখনকার গণ–আন্দোলনের ফলাফল কী হতো, তা এখন মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে এটা বলা যেতেই পারে যে বিবিসি বাংলা সার্ভিস একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল, যা এরশাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের প্রচারে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে সাহায্য করেছিল।

বিবিসি বাংলা সার্ভিস কোনো বাংলাদেশি সংস্থা নয় এবং বিবিসির নিজস্ব সনদ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই তৃতীয় বিশ্বের যেকোনো সামরিক স্বৈরশাসকের কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করার কোনো আশঙ্কা নেই। এরশাদ সরকার বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়। একটি সূত্র অনুসারে, এরশাদ একদিন তাঁর বন্ধুর কাছে বিলাপ করে বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই জানি না কীভাবে বিবিসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।’

  • নিবন্ধটি এই গবেষকের দ্য মিলিটারি রুল অ্যান্ড মিডিয়া, ১৯৭৫-১৯৯০ (২০০৮) গ্রন্থ থেকে সংকলিত

  • ড. রিজওয়ান-উল-আলম, সহযোগী অধ্যাপক, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা কর্মসূচি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়