‘যাক আমার বুথে শেষ পর্যন্ত ১০টি ভোট সংগ্রহ করতে পারলাম’

নৌকার প্রতীক–সংবলিত কার্ড ঝুলিয়ে গোপন বুথে ভোটারের সঙ্গে ঢুকে পড়েন লোকজন। বেলা একটায় জ্যেষ্ঠপুরা ইসলামিয়া হামিদিয়া মাদ্রাসায়
ছবি: সৌরভ দাশ

গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে তিনটায় ভোট দিতে যান গৃহবধূ সায়রা বেগম। তিনি পৌরসভার পূর্ব গোমদণ্ডী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কেন্দ্রটির ৬ নম্বর কক্ষে তিনি ভোট দেন। সায়রা ভোট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা খুশিতে বলে উঠলেন, ‘যাক আমার বুথে শেষ পর্যন্ত ১০টি ভোট সংগ্রহ করতে পারলাম।’

সায়রা বেগম ভোট দিয়ে বের হয়ে এসে প্রথম আলোকে বললেন, ‘কোনো ভোটার নেই। আমি ভোট দিতে যাওয়ায় বুথের কর্মকর্তা খুশি হয়ে যান। কোনো রকমে ১০টি ভোট পূরণ করতে পেরেছে বলে।’

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে মোট কেন্দ্র ৮৬টি। এই প্রতিবেদক ১৫-২০টি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। সব কটিতেই ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুব কম। তবে বেশির ভাগ কেন্দ্র ছিল নৌকার অনুসারীদের দখলে। ভোটার ভোট দিতে গেলেই গোপন কক্ষে ঢুকে বাটন টিপে দেওয়ার কাজটি অবলীলায় করে যাচ্ছিলেন তাঁরা।

পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৭টি কক্ষে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২১৭টি। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৮৫৬ ভোট। একই কেন্দ্রে সকাল পৌনে ১০টায় মোট ভোট পড়ে মাত্র ২০টি। এ সময় দুটি কক্ষ ছিল ভোটশূন্য।

জানতে চাইলে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, উপনির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। তাই ভোটার উপস্থিতি কম হয়।
এই নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ৬ হাজার ১৬৭ জন।

কেন্দ্র ছিল নৌকার নিয়ন্ত্রণে

নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিমের কেন্দ্র শ্রীপুর মসজিদবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।

দরবার দিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ছিল নৌকার এজেন্টদের অবাধ যাতায়াত। দরবার দিঘি কেন্দ্রটির ৬ নম্বর কক্ষে নৌকার এজেন্ট ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন। তিনি গোপন কক্ষে ভোটারদের সঙ্গে বারবার ঢুকছিলেন।

গোপন কক্ষে নিজের আনাগোনা সম্পর্কে বলেন, ‘ভোটাররা কীভাবে ভোট দেবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না। তাই তাঁদের একটু দেখিয়ে দিচ্ছিলাম।’

একই কেন্দ্রের একটি কক্ষে বেবি আকতার নামের এক ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা বারবার গোপন কক্ষে ঢুকছিলেন ভোটারের সঙ্গে। বেবি আকতারও একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘মহিলারা বুঝতে পারছেন না কীভাবে ভোট দেবেন। তাই সাহায্য করার জন্য যাচ্ছিলাম।’

দরবার দিঘি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৯৫টি। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ১১২।

জ্যেষ্ঠপুরা ইসলামিয়া হামিদিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টায় পাওয়া যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিমকে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শ্রীপুরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম। এ সময় রেজাউল করিম জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কেন্দ্রটির ভোটার আনা–নেওয়ার জন্য ছিলেন উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হক ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইউনুচ আজম। কেন্দ্রে গোপন কক্ষ ছিল নৌকার অনুসারীদের অবাধ যাতায়াত।

সারোয়াতলী ইউনিয়নের হোরারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যথারীতি ছিল নৌকার আধিপত্য। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম নৌকার অনুসারীদের চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ভোটাররা ভোট দিতে জানবেন না। তোরা শিখিয়ে দে। বেলা একটা পর্যন্ত এখানে ভোট পড়ে ২২৪টি। মোট ভোট ছিল ২ হাজার ৫৫ জন।’

শাকপুরা আজগর আলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রটির দায়িত্ব ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ কেন্দ্রেও আনারস প্রতীকের কোনো এজেন্ট ছিল না।

আনারস প্রতীকের শাহজাদা এস এম মিজানুর রহমান ও দোয়াত–কলমের কাজী আয়েশা ফারজানা অভিযোগ করে বলেন, বারবার অভিযোগ করেছি নৌকার লোকজন কেন্দ্র দখল করে ভোট নিচ্ছে। কিন্তু লাভ হয়নি।

আরও পড়ুন