প্রতিশ্রুতি, নেতৃত্ব ও সমন্বয় সড়কে মৃত্যু কমাবে

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বহুপক্ষীয় উদ্যোগ দরকার। সঠিক নেতৃত্ব সড়কে মৃত্যু শূন্যে আনতে পারবে।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার নতুন শিকারপুর সড়কে দুর্ঘটনা
ফাইল ছবি

সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ২০১০ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি দেশকে অর্থ দিয়েছিল। এসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি। তালিকায় ছিল তুরস্ক। জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের নিয়ে অনেক সভা শেষে আঙ্কারা ও আফিওন শহরের সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেয় তুরস্ক সরকার। একটি পদক্ষেপ ছিল, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ।

অন্যটি ছিল, সিটবেল্টের ব্যবহার বাড়ানো। প্রকল্পের সময়কাল ছিল ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে গাড়ির গতি কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তবে চালক ও গাড়ির প্রথম সিটে বসা যাত্রীর সিটবেল্টের ব্যবহার বেড়ে যায়। আফিওন শহরে ২০১০ সালে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ২৮ শতাংশ। ২০১০ সালে আঙ্কারায় সিটবেল্ট ব্যবহারের হার ছিল ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ।

সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানো ও দুর্ঘটনা কমানোর কাজ কত জটিল, সেটি বোঝাতে তুরস্কের এই উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট–এর প্রবন্ধে। ৯ জুলাই ল্যানসেট সড়ক দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা বিষয়ে তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। এসব প্রবন্ধে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো ও সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার পর্যালোচনা করা হয়েছে।

গবেষকেরা সড়ক দুর্ঘটনা ও তাতে মৃত্যুর পরিসখ্যান নিয়েছেন মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ পর্যন্ত বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে চারটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন ছিল ২০১৮ সালে। তাতে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা ও তাতে মৃত্যু বাড়ছে। প্রতিবছর দুর্ঘটনায় সারা বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আর আহত হয় পাঁচ কোটি মানুষ। আহত মানুষের মধ্যে অনেকে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। অন্যদিকে ৫ বছর থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর ১ নম্বর কারণ এটি।

সাম্প্রতিক উদ্যোগ

রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের ১৯৯৯ সালের বার্ষিক বৈশ্বিক দুর্যোগ প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ত্রাণকাজ পরিচালনার সময় তাদের বহু কর্মীর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার তথ্য ওই প্রতিবেদনে স্থান পায়। ২০০১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক পাঁচ বছরমেয়াদি কৌশলপত্র তৈরি করে। ২০০৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। একই বছর জাতিসংঘের মহাসচিব প্রথম ‘বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা সংকট’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়গুলোকে নগর উন্নয়ন ও পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রতিরোধ বিষয়ে প্রথম বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একই বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আরও একটি প্রস্তাব পাস হয়। ওই বছর জাতিসংঘ সড়ক নিরাপত্তা সহযোগিতা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬টি বৈশ্বিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে একই উদ্দেশে৵। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগ যেমন ছিল, তেমনি ছিল ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের প্রচেষ্টা। এ সময় সচেতনতা বাড়াতে সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ পালিত হয়েছে। আর মন্ত্রী পর্যায়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ল্যানসেট–এর প্রবন্ধ লেখকেরা বলছেন, এত উদ্যোগের পরও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কী করে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ইস্যু হয়ে উঠল, তা নিয়ে কম বিশ্লেষণ হয়েছে, কম জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, সড়ক নিরাপত্তা একটি জটিল বিষয়, এর সঙ্গে বহুপক্ষ জড়িত। এর জন্য পরিবহন, পুলিশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিচারব্যবস্থার মতো খাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খাতের সঙ্গে যুক্ত নাগরিক সংগঠন, গবেষক, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।

নীতি বিশ্লেষণ

গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্যোগগুলো ছিল বিক্ষিপ্ত–বিচ্ছিন্ন। এ খাতে বরাদ্দও কম ছিল। তখন মূল জোর দেওয়া হতো চালকদের আচার–আচরণের ওপর। এরপর জোর দেওয়া শুরু হয় প্রাক্‌–দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনা–উত্তর পরিস্থিতির ওপর এবং মানুষ, যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও পারিপার্শিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণের আওতায় আসে। এই পুরো পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া।

দেশ দুটি লক্ষ৵মাত্রা ঠিক করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। ১৯৯০–এর দশকে নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়। এর পাশাপাশি যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্ব বণ্টনের ওপর গুরুত্ব দেয়। গবেষকেরা বলছেন, যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক ধারণাটিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে এটা ধারণা করা হয় যে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যক্তির দায়িত্ব। ব্যক্তির আচরণের ফল সড়ক দুর্ঘটনা। চালকের বেপরোয়া আচরণ বা অসচেতন পথচারীর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি করা নীতি–আইন ওই ব্যক্তিদেরই সাজা দেয়।

এ ধারণার বদল হতে দেখা যাচ্ছে। ভিশন জিরো বা শূন্য লক্ষে৵র ধারণায় বলা হচ্ছে, সড়কে মারাত্মক জখম বা মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এ জন্য পরিবহন পদ্ধতি নকশাবিদ এবং সড়ক ব্যবহারকারী উভয়ের জন্য যৌথ ও বহু খাতভিত্তিক উদ্যোগের প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখার মধ্যে বৃহত্তর সামাজিক তাৎপর্য আছে। এ নতুন ধারণার ওপর ভিত্তি করে একাধিক দেশে কাজ হয়েছে। তারপরও বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ব্যাপারে সাড়া পাওয়া যায়নি। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, সমস্যার তুলনায় এ খাতে সরকারি ব্যয় বা বরাদ্দ অনেক কম।

সড়ক নিরাপত্তার ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমর্থন দরকার। এর উদাহরণ ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত করা। ওই সময় রাজনৈতিক নেতাদের সহমতে আনতে ভূমিকা রেখেছিলেন অন্য অংশীজনেরা।

গবেষকেরা বলছেন, ইস্যু হিসেবে সড়ক নিরাপত্তা বা সড়ক দুর্ঘটনার চরিত্র–বৈশিষ্ট৵ বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বিপুলসংখ্যক মানুষ এতে নিহত ও আহত হয়। এ ক্ষেত্রে পার্থক্য চোখে পড়ে। আহত–নিহত মানুষের সংখ্যা উচ্চ আয়ের দেশের চেয়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তিন গুণ বেশি। আফ্রিকায় প্রতি লাখ মানুষে ২৬ জন মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। ইউরোপে এই সংখ্যা ৯। সড়কে মৃত্যুর ৯৩ শতাংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। আবার মেক্সিকোর উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, একটি দেশের অঞ্চলভেদে এই পার্থক্য আছে।

আরেকটি দিক, আর্থিক ক্ষতির ব্যাপকতা। ২০০০ সালে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত বৈশ্বিক অনুমিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থের পরিমাণ ছিল ওই সময়ে ওই দেশগুলো যে আন্তর্জাতিক সহায়তা পেত, তার চেয়ে বেশি। ২০১৪ সালে অনুমিত আর্থিক ক্ষতি আরও বড় হয়ে ওঠে। মৃত্যু হয়েছে এমন সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জিডিপির ৩ শতাংশ, আর নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জিডিপির ৫ শতাংশের সমান।

সড়ক দুর্ঘটনার কঠিনতম আঘাতটি লাগে দরিদ্র পরিবারগুলোতে। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে অনেক পরিবার হিমশিম খায়। আহত হয়ে অনেকে কাজে অনুপস্থিত থাকে, অনেকে আর কাজে ফিরতে পারে না। উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হয়, নিঃস্ব হয়। সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা ক্ষতির মুখোমুখি হয়।

২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘সেভ লাইভস’ নামে কারিগরি একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। ওই প্যাকেজের ছয়টি উপাদান ছিল—গতি ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব, অবকাঠামোর উন্নতি, যানবাহনের নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগ এবং দুর্ঘটনা–উত্তর জীবন রক্ষা। প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে সংগতি বা সামঞ্জস্য রেখে মোট ২২টি পদক্ষেপের (ইন্টারভেনশন) কথা কারিগরি প্যাকেজে ঢোকানো হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করা কঠিন।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ২০১৮ সালে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে (২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী) অনুমিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৪ হাজার ৯৫৪।

সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেখার মূল দায়িত্বে সড়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের। তবে এই কাউন্সিল পরিচালনার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। দেশে সড়ক নিরাপত্তা কৌশলপত্র আছে। তাতে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা ছিল (সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি)। জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ‘ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ওই কর্মসূচিতে যুক্ত ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে যানবাহনের মানের বিষয়টি মানা হয় না। দুর্ঘটনা–পরবর্তী সেবার ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যে আইন আছে, তার বাস্তবায়ন হয় মধ্যম পর্যায়ে। মদ পান না করে গাড়ি চালানোর বিষয়ে আইন আছে, তবে তার বাস্তবায়ন নিম্ন পর্যায়ের। মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা নিয়ে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন মাঝারি পর্যায়ের চেয়ে একটু ভালো, তবে শিশুদের মোটরসাইকেলে চড়া নিষেধ নয়।

সর্বজনীন সুপারিশ

ল্যানসেট–এর গবেষকেরা বেশকিছু সুপারিশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, বহু খাতভিত্তিক উদ্যোগে কার কী ভূমিকা ও নেতৃত্ব, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকে। এর অর্থ দাঁড়ায়, অনেক ক্ষেত্রে কাজের সীমা সুনির্দিষ্ট থাকে না এবং কেউই মনোযোগ দেয় না। এ সমস্যা কাটাতে দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করতে হবে এবং একটি খাতকে নেতৃ৴ত্বের ভূমিকায় রাখতে হবে।

কিছু দেশে বিচ্ছিন্ন কর্মসূচি বা হঠাৎ হাতে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি (অ্যাডহক) প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়। এর পরিবর্তে সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের কর্মসূচিতে বেশি অর্থায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবহন খাতের বাইরের খাতকেও একই উদ্দেশে৵ বিনিয়োগ করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সেভ লাইভস’ কারিগরি প্যাকেজ ও ২২টি পদক্ষেপের বাস্তবায়ন জরুরি। ‘ভিশন জিরো’ পরিস্থিতির অগ্রগতি কী হচ্ছে তা বোঝার জন্য সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত মানুষের তথ্য যথাযথভাবে নথিবদ্ধ করা দরকার। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সড়ক নিরাপত্তায় যুক্ত করা প্রয়োজন। যেমন অ্যালকোহল বা মদের সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্পর্ক আছে। সুতরাং মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ক্ষেত্রে দায় আছে। সড়ক নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ জনবলের ঘাটতি আছে। জনবল বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে।

যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, হেলমেট না পরা এবং সিটবেল্ট না বাঁধা, এ চারটি বিষয় সড়ক নিরাপত্তার অন্যতম ঝুঁকি। গবেষকেরা বলেছেন, শুধু এ চারটি বিষয়কে লক্ষ্যে রেখে কাজ করলে বৈশ্বিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ৪০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।

বছরে বৈশ্বিকভাবে কত সংখ্যক জীবন রক্ষা করা সম্ভব, তারও একটি অনুমিত হিসাব তাঁরা দিয়েছেন। গতি নিয়ন্ত্রণ করে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৮ জনের জীবন, চালকদের নেশা নিয়ন্ত্রণ করে ১৬ হাজার ৩০৪ জনের এবং গাড়ির সিটবেল্ট বাধার বিষয় নিশ্চিত করে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৩ জনের জীবন রক্ষা করা যেতে পারে। আর মোটরসাইকেলের আরোহী ও চালকের হেলমেট পরা নিশ্চিত করে ৫১ হাজার ৬৯৮ জনের জীবন রক্ষা করা যেতে পারে।