এর কারণ কী?

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: সেন্ট মার্টিন সম্পর্ক ভুল ধারণা হলো, এটিকে আমরা প্রবাল দ্বীপ বলি। বস্তুত তা নয়। প্রবাল দ্বীপ প্রবালের কারণে তৈরি হয়। কিন্তু সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পাথুরে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এখানে প্রবাল ছিল। কক্সবাজারের দিকে যাবেন, দেখবেন পানি ঘোলাটে। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের পানি পরিষ্কার। কারণ, সেখানে ভূমির প্রভাব কম। পানি পরিষ্কার থাকার কারণেই সেখানে কোরাল তৈরি হয়। কোরাল তৈরির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অগভীর জায়গায় আলো পৌঁছানো।

সেন্ট মার্টিনে এখন কত ধরনের কোরাল রয়েছে?

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: সেটা নিয়ে সার্বিক গবেষণা হয়নি। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ৬৬টি প্রবাল প্রজাতির দেখা পাওয়ার তথ্য রয়েছে। তবে এখন কমেছে। আমি ছেঁড়া দ্বীপের প্রজাতি নিয়ে জরিপ করেছি, সেখানে ২২ প্রজাতির প্রবাল দেখেছি।  

সেন্ট মার্টিনের মাছের অবস্থা কী?

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: কোরাল যেখানে তৈরি হয় সেখানে মাছের বৈচিত্র্য বেশি থাকে। এ দ্বীপে বর্তমানে ২৫০–এর বেশি প্রজাতির রঙিন মাছ রয়েছে। বাংলাদেশে দুটি ইকোসিস্টেম (প্রতিবেশব্যবস্থা) ভীষণ রকমের গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দরবন, অন্যটি সেন্ট মার্টিন। ডিম পাড়ার সময় হলে মাছেরা এ দুই উপকূলে আসে। এর তিনটি কারণ রয়েছে—এটি ব্রিডিং গ্রাউন্ড (প্রজননক্ষেত্র), এটি খাদ্যের জোগান দেয়, এটি আশ্রয়স্থলও। এ কারণে শুধু জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নয়, বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে যে আধার, সেটি রক্ষা করার জন্য হলেও সেন্ট মার্টিন রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।  

জীববৈচিত্র্যের এখন কী অবস্থা?  

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে যে পর্যটন গড়ে উঠেছে, সেটি প্রচণ্ড রকমের অপরিকল্পিত। যত্রতত্র রিসোর্ট গড়ে উঠছে। বাণিজ্যিক জাহাজ গিয়ে ভিড়ছে, মাছ ধরার নৌকার নোঙর ফেলা হচ্ছে। এসব কারণে কোরাল মরে যাচ্ছে। একসময় পেইন্ট (রং) করা কোরাল বিক্রি হতো। কিন্তু এখন আর হয় না। এর একটা কারণ নিষেধাজ্ঞা, অন্যটি হলো কোরাল এখন আর পাওয়া যায় না। আবার একসময় পাঁচ ধরনের কচ্ছপের দেখা মিলত। এখন তা দুটিতে নেমেছে। সেন্ট মার্টিনের পানির নিচে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির সি-উইড (সামুদ্রিক আগাছা) পাওয়া যায়। এটি ভীষণ রকমের বিরল ব্যাপার। এটা দিয়ে তৈরি খাবার যেমন মূল্যবান তেমন পুষ্টিকরও। অনেক দেশেই এসবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব সি-উইড যদি সেন্ট মার্টিনে সংরক্ষণ করে অন্য জায়গায় চাষাবাদ করা হয়, তাহলে অর্থ উপার্জনের বিরাট একটা উপায় খুলে যেতে পারে। কক্সবাজারের নুনিয়াচর নামের একটা জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে।

দ্বীপটি রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: সরকার গত বছর জানুয়ারিতে সেন্ট মার্টিনকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া (সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা) হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি একটি চমৎকার ব্যাপার। তবে ঘোষণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। এর প্রয়োগও করতে হবে। সেন্ট মার্টিনের প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে হিসাব করে ফেলতে হবে। কোনো জায়গায় কী করা যাবে, কী করা যাবে না, করলে কীভাবে করতে হবে—এসব নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে।

সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে ১৯৯৯ সালে। ভবন নির্মাণ তো বন্ধ হয়নি।

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: সেন্ট মার্টিনে পর্যটন নিয়ে সরকারের পরিবেশ এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দুই ধরনের অবস্থান দেখা যাচ্ছে। এ দুই মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেন্ট মার্টিনে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। কেয়াবন ও ম্যানগ্রোভ বন উজাড় হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনের জন্য এসব উদ্ভিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ দ্বীপে বাতাসের গতি অনেক বেশি। গাছপালা না থাকলে উপকূলে যে বালু থাকে, সেগুলো উড়ে গিয়ে দ্বীপের পরিবেশ আরও দূষিত হবে। সেন্ট মার্টিন অনেক ছোট জায়গা। এটি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা কঠিন কিছু না। আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে। সেন্ট মার্টিনের ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) নয়।

দ্বীপটিতে পরিবেশ রক্ষা করে কীভাবে পর্যটনের ব্যবস্থাও রাখা যায়?

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী: সেন্ট মার্টিনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। কিছু জায়গা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কিছু জায়গা সরকার সংরক্ষণ করবে, যা অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা যাবে। আর কিছু জায়গায় কোনো ধরনের কার্যক্রম করা যাবে না।