যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিনের নির্দেশে গাজীপুরে রেললাইন কাটা হয়, গ্রেপ্তার ২: সিটিটিসি

ট্রেন কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে সিটিটিসিছবি: সিটিটিসির সৌজন্যে

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে গাজীপুরের শ্রীপুরে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন রেললাইন কেটেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম সিটিটিসি। প্রথমে তাঁরা রেললাইনের নাটবল্টু খুলতে চেয়েছিলেন। সেটা না পেরে পরে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে লাইন কেটে ফেলেন।

শ্রীপুরে রেললাইন কেটে নাশকতার ঘটনায় গতকাল রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দুজনকে। তাঁরা হলেন ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে যুবদল নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির (৪৩) এবং লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইমন হোসেন (১৯)।

আজ সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানেই এসব কথা জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিসিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার ইখতিয়ার রহমান কবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টির বেশি বাসে অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে সিটিটিসি।

আরও পড়ুন
গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে বনখড়িয়ায় ১২ ডিসেম্বর রাতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

সিটিটিসি বলছে, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন রেলে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি গাজীপুর ছাত্রদলের দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা হলেন গাজীপুরের আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা এবং গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম।

তাঁদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সিটিটিসি আরও জানায়, ইখতিয়ার রেললাইন কাটার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রেললাইন কাটার জন্য লোকবল দেওয়ার কথা জানান। এ জন্য তিনি লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমে ইমনকে বড় লোহার পাত কাটা শেখার জন্য টাকা দেন। ইমন লোহা কাটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয়ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা হয়। আর লোহা কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি ঢাকা থেকে কেনা হয়। কবির, ইমন, তোহা ও মাসুম মিলে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুরের একটি দোকান থেকে সব যন্ত্রপাতি কিনে ইমনের বাসায় রাখেন।

১২ ডিসেম্বর ইমনের বাসা থেকে যন্ত্রপাতি গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন ইমন ও কবির কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে জয়দেবপুর রেলস্টেশনে যান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তোহা ও মাসুম চলাচলের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করা, গ্যাস সিলিন্ডার কেনাসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। পাশাপাশি ট্রেনের শিডিউল জেনে রাখেন। এরপর ১৩ তারিখ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। এ সময় বেশ কয়েকজনকে পথ থেকে তুলে নেওয়া হয়। নয়জন একসঙ্গে রেললাইন কাটার কাজ করেন‌।

গাজীপুরের শ্রীপুরে কীভাবে রেললাইনে নাশকতা হয়, তা নিয়ে ব্রিফ করেছে সিটিটিসি
ছবি: সিটিটিসির সৌজন্যে
আরও পড়ুন

১৩ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখরিয়া এলাকায় আন্তনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুরে যাচ্ছিল। ১২ ডিসেম্বর রাতের কোনো এক সময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও ভাওয়াল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি রেলপথের একটি অংশ কেটে রাখা হয়। এতে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে এবং ১ যাত্রী নিহত ও অন্তত ১৪ জন আহত হন। এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা হয়। আশরাফুল আলম খান নামের রেলের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি করেন।