ছুটির দিনেও বিক্ষোভ, শাহবাগে অবরোধ
কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তাঁরা ১ জুলাই থেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছেন। গতকাল দুটি স্থানে শিক্ষার্থীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধার কারণে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে পারেননি বলে খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে।
শাহবাগ অবরোধ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার গাড়িগুলো চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা পথ তৈরি করে দেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে মারধর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে টিএসসি থেকে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। শাহবাগ থানার একটু আগে তাঁকে থামান আন্দোলনকারীদের কয়েকজন।
এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চারুকলা অনুষদের সামনে তাঁকে মারধর করা হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিকেল সাড়ে চারটায় কলাভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে পার্শ্ববর্তী বাহাদুরশাহ পার্ক, কবি নজরুল কলেজের সামনে দিয়ে আবার ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ ও অবরোধ
ঢাকার বাইরে অন্তত ১৫টি স্থানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগের বাধায় মানববন্ধন করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেন তাঁরা। বিক্ষোভে অংশ নেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে গতকাল বিকেল পাঁচটায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা অংশ নেন। মিছিলটি ষোলশহর থেকে ২ নম্বর গেট, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি হয়ে নগরের আলমাস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা ঘুরে ১৪টি হলের সামনে দিয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা। মশাল মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে সড়কে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশি বাধায় যেতে পারেননি। পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে অবস্থান নেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। এ সময় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে থামে। সেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে মিছিলটি আনসার ক্যাম্পের সামনে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্থানটিকে ছাত্র আন্দোলন চত্বর নামে ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ময়মনসিংহে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল বিকেল চারটায় শিক্ষার্থীরা নগরের আনন্দ মোহন কলেজে জমায়েত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শহরের গাঙ্গিনারপাড় ট্রাফিক মোড় এলাকায় সড়কে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নেছা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করেন।
ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তাঁরা। মিছিল শেষে আব্দুল জব্বার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বগুড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এক সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। কর্মসূচিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আজ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এখন সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে বাকি কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাসের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। আজ শনিবার আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয়ভাবে মাঠের কোনো কর্মসূচি রাখেননি। তবে সারা দেশের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (আজ শনিবার) সব বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় জেলায় আমাদের অনলাইন-অফলাইন প্রতিনিধি বৈঠক হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেব। আমাদের এক দফা দাবি সরকারকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।’