১৩ বছর পর সনদ পাওয়া ভুক্তভোগীকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় বহাল

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৩ বছর পর এলএলবি স্নাতকের সনদ পেয়েছিলেন মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন।

২০২১ সালে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন মহিউদ্দিন। সেখানে তিনি ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট একই বছরের ২১ নভেম্বর ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রশ্নে রুল দেন। রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে এই অর্থ দুই মাসের মধ্যে রিট আবেদনকারীকে (মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদ) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ব্যর্থ হলে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে মুনাফা (ইন্টারেস্ট) দিতেও বলা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছর লিভ টু আপিল করে, যার ওপর আজ শুনানি হয়।

আদালতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ আল আসাফুর আলী রাজা। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম শামসুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

পরে মহিউদ্দিনের আইনজীবী এম শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তাঁকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রইল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৬০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী সৈয়দ আল আসাফুর আলী রাজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’

নথিপত্র থেকে জানা যায়, মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যশোরের শহীদ মশিউর রহমান কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালের এলএলবি (শেষ বর্ষের) পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৯৮৮ সালের মে মাসে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি অনুত্তীর্ণ হন।

এ অবস্থায় উত্তরপত্র আবার নিরীক্ষার জন্য আবেদন করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। পরে একই বছর যশোরের আদালতে ঘোষণামূলক মামলা করেন মহিউদ্দিন। এ মামলায় ১৯৯০ সালের ১৯ আগস্ট যশোরের আদালত রায় দেন। রায়ে সাতটি পত্রের মধ্যে দ্বিতীয় পত্রের নম্বর ছাড়া অপর ছয়টি পত্রের মোট নম্বর গড় করে যে নম্বর হবে, সে হিসাবে দ্বিতীয় পত্রে প্রাপ্ত নম্বর গণ্য করে দুই মাসের মধ্যে তাঁর ফলাফল ঘোষণার নির্দেশ দেন আদালত।

এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যশোরের জেলা জজ আদালতে আপিল করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যশোরের অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত ১৯৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। এতে আগের রায় বহাল থাকে। এ রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে আবেদন (সিভিল রিভিশন) করে।

১৯৯৯ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে রায় দেন। এই রায়ে মহিউদ্দিনের এলএলবি পরীক্ষার ফলাফল দুই মাসের মধ্যে ঘোষণার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, দীর্ঘায়িত মামলার জন্য মহিউদ্দিন খরচা পাওয়ার অধিকারী। এ রায়ের পর ২০০১ সালের ২৯ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মহিউদ্দিনকে কৃতকার্য উল্লেখ করে ফলাফল প্রকাশ করে। পাশাপাশি তাঁর এলএলবি উত্তীর্ণের সনদও ইস্যু করা হয়।

মামলা-সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মহিউদ্দিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান। এতে দৃশ্যমান ফল না পেয়ে ২০২১ সালে ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।

আরও পড়ুন