মালদ্বীপ: বিদেশি আগ্রাসন রুখে দেওয়ার দিন

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস; কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে, কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

মালদ্বীপে ১৯৮৮ সালে অভ্যুত্থানচেষ্টার নেতা আবদুল্লাহ লুৎফি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২৫ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালে মুক্তি পান তিনিছবি: মালদ্বীপের সংবাদপত্র মিহারুর সৌজন্যে

ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট ছোট প্রবালদ্বীপের মালা দিয়ে সাজানো দেশ মালদ্বীপ। পর্যটকদের কাছে এটি স্বর্গরাজ্য হলেও দেশটির ইতিহাসে আছে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের রাত, যা শেষ হয়েছিল এক বীরোচিত বিজয়ের মাধ্যমে। আজ ১৩ ডিসেম্বর (মালদ্বীপের স্থানীয় ক্যালেন্ডারে ৩ নভেম্বর হলেও বিজয়ের এই মাসে আমরা সেই সংগ্রামের প্রতীকী দিনটিকে স্মরণ করছি) মালদ্বীপের সেই প্রতিরোধের গল্প জানব। মালদ্বীপে দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়।

১৯৮৮ সাল। মালদ্বীপের শান্ত নীল জলরাশিতে আচমকা ঝড় ওঠে। শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘প্লট’–এর  ভাড়াটে সেনারা স্পিডবোটে করে গোপনে রাজধানী মালে আক্রমণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমের সরকারকে উৎখাত করা। ভোররাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো দখল করে নেয়। মালদ্বীপের নিজস্ব কোনো শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল না, ছিল না ভারী কোনো অস্ত্র। মনে হচ্ছিল, দেশটির সার্বভৌমত্ব বুঝি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হারিয়ে যাবে।

মালদ্বীপের জাতীয় পতাকা

কিন্তু মালদ্বীপের জাতীয় রক্ষীবাহিনী (ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস) তাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই অসীম সাহসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা প্রেসিডেন্টকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে গেরিলা কায়দায় লড়তে থাকে। একই সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের কাছে জরুরি সাহায্যের আবেদন জানায়। ভারত দ্রুত সাড়া দেয় এবং ‘অপারেশন ক্যাকটাস’-এর মাধ্যমে প্যারাশুট রেজিমেন্ট নামিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভাড়াটে সেনারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় অথবা পালিয়ে যায়।

এই বিজয় মালদ্বীপের জন্য ছিল অস্তিত্ব রক্ষার বিজয়। আজকের দিনে মালেতে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া হয় এবং কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। মালদ্বীপের মানুষ বিশ্বাস করেন, সেদিন যদি তারা সাহস হারিয়ে ফেলত, তবে হয়তো আজকের স্বাধীন মালদ্বীপ মানচিত্রে থাকত না।

বিশ্বমানচিত্রে মালদ্বীপ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও আমরা দেখেছি, কীভাবে বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা আর নিজেদের মনোবল বিজয়ে ভূমিকা রাখে। মালদ্বীপের এই বিজয় আমাদের শেখায়, ‘আকারে ছোট হলেও একটি জাতির দেশপ্রেম আর সাহসের কোনো সীমা থাকে না।’ ১৩ ডিসেম্বর তাই ভারত মহাসাগরের তীরে আত্মমর্যাদা রক্ষার এক উজ্জ্বল দিন।