বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আলোচনা সভা

বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদার ১২৩তম জন্মবার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। ঢাকা, ৩০ নভেম্বরছবি: বিজ্ঞানচিন্তা

বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদার ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চায় গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানের একক ও প্রধান বক্তা ছিলেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক সরকার আমিন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আসাদুজ্জামান। সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। আর অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হাসান কবীর।

স্বাগত বক্তব্যে সরকার আমিন বলেন, ‘বিজ্ঞানী বলতে আমরা বুঝি বড় কোনো কিছু আবিষ্কার করা। কুদরাত-এ-খুদা প্রায়োগিক বিজ্ঞান নিয়ে এ ধরনের কাজ করেছেন সত্যি, কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি যুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের বিজ্ঞানচর্চার অগ্রপথিক। আমরা আজ তাঁকে নিয়ে আরও জানব।’

মূল বক্তব্যে আব্দুল কাইয়ুম সবাইকে নিজের ও বিজ্ঞানচিন্তার পক্ষ থেকে স্বাগত জানান। বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদাকে স্মরণ করেন গভীর শ্রদ্ধায়। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানী ড. কুদরাত–এ–খুদা পাটের মণ্ড তৈরি এবং এ থেকে পারটেক্স বোর্ড তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে তাঁর গবেষণা মূল্যবান অবদান রেখেছে এবং এখনো রাখছে। তবে তাঁর অন্যতম বড় কাজ হলো, তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি ও পড়াশোনায় বাংলার প্রচলনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে বাংলায় বিজ্ঞানের অনেক বই প্রকাশিত হয়, সাময়িকী প্রকাশিত হয়। এটা তরুণদের বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলে। তাঁর দেখানো পথে আমাদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে হবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সেকালে পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। কুদরাত-এ-খুদা পাটজাত পণ্যকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করেছেন। এই মহা মনীষীর কাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের বিজ্ঞান প্রসারে কাজ করে যেতে হবে।’

বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদার কাজ মূলত প্রায়োগিক ধরনের বৈজ্ঞানিক কাজ বলে উল্লেখ করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘কুদরাত-এ-খুদা যেমন তাঁর সময়ে বিজ্ঞানচর্চাকে এগিয়ে নিয়েছেন, আমাদেরও সেভাবে এগোতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি না এগোলে আমরা পশ্চাদপদ হয়ে পড়ব। তাই আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

বাংলা একাডেমির সচিব মো. হাসান কবীর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজ এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন। কুদরাত-এ-খুদা যেমন দেশের অগ্রযাত্রায় কাজ করেছেন, আমাদেরও সেভাবে কাজ করতে হবে। আমরা তাঁর ও তাঁর মতো মনীষীদের আদর্শ নিজেদের ব্যক্তিজীবনেও চর্চা করব। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।’

বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদা বাংলাদেশি রসায়নবিদ, গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ। ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম। তিনি পাটের মণ্ড থেকে পারটেক্স তৈরিতে অবদান রাখার পাশাপাশি সমুদ্রের পানি থেকে দেশেই ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড ও ম্যাগনেশিয়াম সালফেটের মতো লবণের বাণিজ্যিক উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এসব লবণ বিভিন্ন গবেষণায় প্রচুর ব্যবহৃত হয়।

এ ছাড়া উদ্ভিদবিজ্ঞান, মৃত্তিকাবিজ্ঞানসহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে কুদরাত-এ-খুদার। শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৭৬ সালে একুশে পদক এবং ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর এই বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।

কুদরাত-এ-খুদার জন্মদিন উদ্‌যাপনে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।