‘তোমাকে হাঁটতেই হবে একাত্তরের সাথে’

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কনসার্টের আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ছবি: সৈয়দ রিফাত মোসলেম

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে চব্বিশের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান—পুরোটা মিলেই বাংলাদেশ। তাই যারা চব্বিশ আর একাত্তরকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়, বিভাজন চায়, তাদের রুখে দিতে হবে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিজয় দিবস কনসার্ট’এ গানে গানে এমন বার্তাই দেন শিল্পীরা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

বেলা তিনটার কিছু আগে তারার মেলা সংগীত একাডেমির শিল্পীদের গান পরিবেশনার মাধ্যমে কনসার্ট শুরু হয়। নারী, পুরুষ সমাবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি, বাংলাদেশের নাম’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’সহ নানা দেশাত্মবোধক গান। এরপর মঞ্চে আসে ব্যান্ড এফ মাইনর। তারা পরিবেশন করে ‘রেল লাইনের ধারে’ ও ‘জংলা ফুল’ শিরোনামের দুটি গান।

বেলা সাড়ে তিনটার কিছু আগে মঞ্চে ওঠেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। গানে গানে তিনি বলেন, ‘চব্বিশ আর একাত্তর, যারা করে মুখোমুখি, চলো একখানা বাংলাদেশ হয়ে তাদেরকে রুখি। চব্বিশ আর একাত্তর সবই তো বাংলাদেশ, যারা বিভাজনে বিশ্বাস করো তোমাদর দিন শেষ।…চব্বিশ ছিল, চব্বিশ আছে, থেকে যাবে পাহারাতে, কিন্তু তোমাকে হাঁটতেই হবে একাত্তরের সাথে।’

বিকেল চারটার দিকে গান পরিবেশন করে ব্যান্ড ফিরোজ জং। গানের ফাঁকে ফিরোজ জংয়ের ভোকালিস্ট মার্ক রাতুল সিনহা বলেন, ‘আমাদের যখন এই শোর কথা বলা হয়েছে, এর পর থেকে অনেক মুক্তিযুদ্ধের গান শুনতেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো আমি জন্মাইনি। যখন গানগুলো শুনছি আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল, চোখ দিয়ে পানি এসে যাচ্ছিল। এর কারণ আমাদের বুকে মুক্তিযুদ্ধ।’

বিকেলের দিকে দর্শক কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মঞ্চের সামনে এবং আশপাশের এলাকা। সবার অপেক্ষা ব্যান্ড শিরোনামহীন আর লালন–এর জন্য। সন্ধ্যা ৭টার পরে মঞ্চে ওঠে শিরোনামহীন। ‘বুলেট কিংবা কবিতা’, ‘একা পাখি বসে আছে’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশনা করে তারা। এ সময় ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শেখ ইশতিয়াক বলেন, ‘৫৪ বছর আগে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জন্য আজকের দিনটি উপহার দিয়ে গেছেন। সবাইকে পাখির মতো মুক্ত আকাশে ওড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।’

শিরোনামহীনের পর রাত ৮টায় গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠে ব্যান্ড লালন। গানের তালে তালে দর্শকেরা মুঠোফোনের ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে উল্লাস করেন। কেউ কেউ ওড়াচ্ছিলেন বাংলাদেশের পতাকা। লালন ব্যান্ডের ‘পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’ গান পরিবেশনের সময় দর্শকদের উন্মাদনা বাধ ভাঙে। রাত সাড়ে আটটার পর কনসার্ট শেষ হয়।

কনসার্টে আরও গান পরিবেশনা করেন ব্যান্ড ইলা লালালা, টং–এর গান, আফটার ম্যাথ ও বাংলা ফাইভ। কনসার্টটি উপস্থাপনা করেন দীপক কুমার গোস্বামী ও মারিয়া ফারিহ।