‘বরিশাল হবে শান্তির, ভীতিমুক্ত, আধুনিক, নিরাপদ’

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। বুধবার দুপুর বারোটার দিকে বরিশাল নগরের বগুড়া রোডের একটি কনভেনশন সেন্টারে
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। ৩৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি বলেছেন, বরিশাল সিটি হবে উন্নত, আধুনিক, পরিবেশবান্ধব, মানবিক এবং নিরাপদ; যেখানে নাগরিকেরা জুলুম নয়, শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারবেন। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত বরিশালে বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদনে সহনীয় ফি নির্ধারণ, হয়রানি ও ভীতিমুক্ত করা হবে। এ জন্য নির্বাচনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।

আজ বুধবার দুপুরে নগরের বগুড়া সড়কের একটি কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আবুল খায়ের। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরের অসহনীয় গৃহকরকে (হোল্ডিং ট্যাক্স) সহনীয় পর্যায়ে এনে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

নগর ভবনের সব দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে জানিয়ে আবুল খায়ের বলেন, বিগত দিনের মুখ থুবড়ে পড়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আবার সচল করে বরিশাল শহরকে একটি উন্নত ও আধুনিক নগরে পরিণত করা হবে। একই সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষায় দখল-দূষণে অস্তিত্বসংকটে পড়া খালগুলোকে খনন করে পানির প্রবাহ ফিরিয় আনার পাশাপাশি অন্যান্য জলাশয় সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে। বরিশালকে একটি পরিবেশবান্ধব সবুজ নগরে পরিণত করতে কাজ করবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

ইশতেহারে নগরের কাঠামোগত উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, সেবার মান বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট নিরসনসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘বরিশাল নগরের উন্নয়নে নগর–পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ অন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি উন্নত জনবান্ধব বরিশাল নগর গড়ব। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করে করব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান সহজ করে অনলাইন সেবা চালু করব। এ ছাড়া বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনে সহনীয় ব্যয় নির্ধারণ, হয়রানি ও ভীতিমুক্ত করা হবে।’

আরও পড়ুন

নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ড্রেনেজ–ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ–ব্যবস্থা নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে আবুল খায়েরের। ইশতেহারে তিনি বলেন, খাল খনন, নগরের বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্য সমাধান, নতুন রাস্তা নির্মাণ, অনলাইন ওয়ান–স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে শৃঙ্খলা আনা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ময়লা–আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ ও পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে জৈব সার, বায়োগ্যাস উৎপাদন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মশকনিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, শতভাগ বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি নগরের রিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলো চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নগরের প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া বরিশালকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বরিশাল হবে শান্তির, ভীতিমুক্ত, আধুনিক, নিরাপদ নতুন বরিশাল।

আরও পড়ুন

ইশতেহারে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ আরও বলেন, বরিশাল নগরকে গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কলোনিবাসীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন এবং বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন করা হবে। বরিশাল নগরীতে গ্যাস–সংযোগ প্রদান, প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বরিশালকে ডিজিটাল নগর হিসেবে গড়ে তোলার কথাও বলেছেন আবুল খায়ের। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদানসহ সরকার প্রবর্তিত সব ধরনের ভাতা যথাযথভাবে বণ্টন করা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নগরের বিভিন্ন সড়কের নামকরণের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশতেহারে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক নগর প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন আবুল খায়ের। তরুণসমাজের জন্য আইটি নগর প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন বলেও জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী। ইশতেহারে বলা হয়েছে, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, নগরের বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নগরের সব মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মন্দির ও গির্জার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ নিশ্চিতের বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, নগরে বিনোদনকেন্দ্র ও পার্ক নির্মাণ করা এবং বরিশালকে শিল্প–বাণিজ্য ও পর্যটন নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আবুল খায়ের বলেন, ‘আমার দরজা বরিশালের সব মানুষের জন্য সব সময় খোলা থাকবে। আমি কথিত নগরপিতা নয়, প্রকৃত নগর সেবক হতে চাই। শাসন নয়, সেবা দিতে চাই।’

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহসীন, নির্বাচন পরিচালনা দপ্তরের প্রধান লস্কর নুরুল হক, সদস্য আনিস উদ্দিন আহমেদ, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।