১৪ মাসের বিচার যদি খুব দ্রুত হয়, তাহলে বলার কিছু নেই: প্রসিকিউটর মিজানুল

প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলামফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেছেন, ১৪ মাসের বিচার যদি খুব দ্রুত হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর বলার কিছু নেই।

আজ বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক বলেন, শেখ হাসিনার মামলার বিচার অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে হয়েছে বলে প্রশ্ন উঠেছে। তখন এ কথা বলেন প্রসিকিউটর মিজানুল।

প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত) মাসে। এখন ২০২৫ সালের নভেম্বর মাস। ১৪ মাসের বিচার যদি খুব দ্রুত হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর বলার কিছু নেই।’

‘পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ করার অধিকার রাখে না’

প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলামকে আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান যথাযথ আইনি সহায়তা পাননি। তাঁদের পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের বক্তব্য কী?

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ সালে তৈরি করা হয়েছে। যদিও এই ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সালে স্থাপিত হয়েছে। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই আইনের একটি সংশোধনী আনে। সেই সংশোধনীতে অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান যুক্ত করে। কাজেই এই বিধানটা ওই সময়কার সরকারের প্রবর্তিত। এটা নতুন সরকার প্রবর্তন করেননি। কাজেই এর দায়দায়িত্ব এই সরকারের নয়। এই সরকার ও প্রসিকিউশন আইনটাকে ফলো করে। আর পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ করার জন্য প্রয়োজন আসামির উপস্থিতি। আসামি আইনের আশ্রয়ে নেই। তিনি তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে আইনজীবী নিয়োগ করার কোনো অধিকার রাখেন না।

অন্তর্বর্তী সরকার তো কয়েকবার আইন পরিবর্তন করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, তাঁদের ভাষায় যাঁরা পছন্দের আইনজীবী বা যোগ্য আইনজীবী, এমন পাঁচজন ব্যক্তি যদি এসে বলেন যে তাঁর আইনজীবী, তাহলে ট্রাইব্যুনাল কাকে নিয়োগ দেবেন?

ডিএমপি কমিশনারের গুলির নির্দেশ প্রসঙ্গ

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার (ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী) একটা নির্দেশ দিয়েছেন, যদি কেউ বাসে আগুন দিতে যায় বা ককটেল বিস্ফোরণ করতে যায়, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গুলি করতে।

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা এই মামলার (ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয় আশুলিয়ায় ছয়জন পুড়িয়ে হত্যা মামলা উপলক্ষে) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, ‘সম্পৃক্ত না, কিন্তু নিষ্ক্রিয় তো একটা অপরাধ।’ তখন প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, এটি এই মামলার বিষয়বস্তু নয়। এর সঠিক উত্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশপ্রধান বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দিতে পারবেন।

মামলার রায়ের কপি এখনো পায়নি প্রসিকিউশন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়ের কপি এখনো পায়নি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে গত সোমবার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলামকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রায়ের কপি পেয়েছেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমাদের হাতে এখনো আসেনি।’

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয় আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এ মামলার রায়ের কপি প্রসিকিউশন, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সাবেক আইজিপি মামুনকে দেওয়া তাদের দায়িত্ব। রায়ের কপি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। দ্রুতই তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রায়ের কপি পাঠাবে।