বেসিসের কার্যালয়ে চুরি, টাকা ও ল্যাপটপ নিয়ে গেল চোর

বেসিস

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম বড় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) কার্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে।

বেসিসের পক্ষ থেকে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা একটি মামলায় বলা হয়েছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটির কার্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখায় চুরির ঘটনাটি ঘটে। চোররা দুটি ল্যাপটপ ও দুই লাখ টাকা নিয়ে গেছে।

বেসিসের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষের মধ্যে চুরির এ ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় মামলা করেছেন বেসিসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাজী জাহিদুল ইসলাম। গত ২২ ফেব্রুয়ারি করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, চোররা রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিডিবিএল ভবনের পাঁচতলায় বেসিসের কার্যালয়ে প্রবেশ করে চুরি করে।

বিষয়টি নিয়ে বেসিসের সচিব হাশিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চুরির ঘটনায় পুলিশের তদন্ত চলছে।

এদিকে বেসিসের ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসিস সূত্র জানায়, তাদের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল তারা মিজান অ্যান্ড কোং নামের একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অডিট ফার্ম দিয়ে তাদের হিসাব নিরীক্ষা করাবে। কিন্তু পরে তা করা হয় অধিকারী অ্যান্ড কোং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে।

পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বেসিসের কয়েকজন পরিচালক। তাঁরা বলছেন, এখানে নিয়ম মানা হয়নি। পাশাপাশি চুরির বিষয়টিও সর্বশেষ পর্ষদ সভায় জানানো হয়নি।

অবশ্য সংগঠনটির সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কিছুই আইনের বাইরে হয়নি। সংগঠনের আইন পরামর্শকের সঙ্গে কথা বলেই কাজ করা হয়েছে।

১৬ মার্চ বেসিসের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বেসিসের সদস্যরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী সভার ১৪ দিন আগে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তাদের পাঠানো হয়। কিন্তু তার আগে পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রতিবেদন অনুমোদিত হতে হয়। পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্যের অভিযোগ, তাঁদের যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, তা পর্ষদ সভায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দিয়ে করানো হয়নি। নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্ষদে অনুমোদিত হয়নি।  

বেসিসের পর্ষদ সভা হয় ৯ মার্চ। সভার পরদিন বিষয়টি নিয়ে বেসিসের তিনজন পরিচালক ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অর্থাৎ আপত্তি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বেসিসের নিয়ম ও কোম্পানি আইন অনুযায়ী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে হলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের অনুমোদনের বিষয়টি পর্ষদকে জানানো এবং বিশেষ সাধারণ সভার অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এর কোনোটাই না করে সব সদস্যকে নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

বেসিসের অন্যতম পরিচালক রাশাদ কবির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে, ইজিএম (বিশেষ সাধারণ সভা) না করে এ ধরনের কাজ করা হলে পর্ষদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

পর্ষদ সভা সূত্রে জানা যায়, সভায় পর্ষদকে জানানো হয় আগের প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রতিবেদন তৈরি করছিল, তাতে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার বেশি পরিমাণে কর দেওয়ার বিষয় রয়েছে। সংগঠনের স্বার্থেই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা হয়েছে।

বেসিসের আরেকজন পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক বাছাইয়ে যে চারটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছিল, তাদের কাউকে দিয়ে নিরীক্ষা করানো হয়নি। সর্বশেষ পর্ষদ সভায় যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেটা টেকেনি।