পদত্যাগী ৫৯ জনপ্রতিনিধির ৩৫ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী

  • সংসদ সদস্য হতে পদত্যাগ করা চার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছেন।

  • জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে গিয়ে ৪ উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। ফলে তাঁরা একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছেন।

নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে ৫৯ জন জেলা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন ৫১ জন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন ৪ জন আর পৌরসভার মেয়রও ছিলেন ৪ জন।

তাঁদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক পেলেন ১০ জন। তাঁদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ৮ জন। বাকি ২ জনের ১ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, অপরজন পৌরসভার মেয়র। এ ছাড়া নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৫ জন।

পদত্যাগ করা জেলা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

পদত্যাগ করেছিলেন ৫৯ জন জেলা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র। এর মধ্যে নৌকা পেয়েছেন ১০ জন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার অঙ্কে নৌকা পেয়েও চারজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। এ ছাড়া নৌকা প্রতীক না পেয়ে ৫১ উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করছেন ৩২ জন। পদত্যাগ করেও মনোনয়নপত্র তোলেননি ৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান। বাকি ৪ জনের মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ২ জন আদালতে গেছেন। ১ জন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী। আরেকজন ব্যক্তিগত কারণে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে পদত্যাগ করা চার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে ২ জন নাম প্রত্যাহার করে নেন। ১ জন নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরেকজন চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করছেন।

এ ছাড়া পদত্যাগ করা চার পৌরসভার মেয়রের মধ্যে একজন নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। একজন নৌকা প্রতীক পেয়েও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জন্য নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে গিয়ে চার উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। ফলে তাঁরা একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছেন।

নৌকা পেলেন এক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

সংসদ সদস্য হতে পদত্যাগ করা চার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন নৌকা পেয়েছেন। তিনি মতিয়ার রহমান। লালমনিরহাট-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। মতিয়ার লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলী জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ আসনে (কুড়িগ্রাম-২) জাতীয় পার্টির প্রার্থী করা হয়েছে পনির উদ্দিন আহমেদকে। হবিগঞ্জের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরীও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এ আসনে (হবিগঞ্জ ১) জাতীয় পার্টির প্রার্থী করা হয়েছে আবদুল মুনিম চৌধুরীকে। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করছেন। এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মণ্ডল।

আরও পড়ুন

জাতীয় পার্টির জন্য সরে যান ৪ উপজেলা চেয়ারম্যান

জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে গিয়ে চার উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। ফলে তাঁরা একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছেন। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দ নৌকা প্রতীকে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে গিয়ে আকন্দ তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ আসনে (ময়মনসিংহ-৫) প্রার্থী করা হয়েছে জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন আহমেদকে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে আসাদুজ্জামান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আসনটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফুজ্জামানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বগুড়ার আদমদীঘি (বগুড়া-৩) উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম তালুকদার জোটের প্রার্থী হওয়ায় সিরাজুল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান। তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ আসন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দেওয়া হয়েছে।

নৌকা পেলেন পদত্যাগ করা ৮ উপজেলা চেয়ারম্যান

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদকে (মুন্সিগঞ্জ-১) আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ছাড়া নৌকা দেওয়া হয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এস এম আতাউল হক (সাতক্ষীরা-৪), সুনামগঞ্জের শাল্লার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (সুনামগঞ্জ-২), চট্টগ্রামের পটিয়ার মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১২), চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এস এম আল মামুন (চট্টগ্রাম-৪), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শফিকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৪), শেরপুরের শ্রীবরদীর এ ডি এম শহিদুল ইসলাম (শেরপুর-৩) এবং বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মজনুকে (বগুড়া-৫)।

এক মেয়র পেলেন নৌকা প্রতীক

সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য পদত্যাগ করেছিলেন চার পৌর মেয়র। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী-৪)। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মোহাম্মদ ফয়সাল ও ময়মনসিংহ-৭ আসনে এ বি এম আনিছুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। বগুড়া-২ আসনে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তৌহিদুর রহমান।

আরও কয়েকজনের তথ্য

নির্বাচন করতে কক্সবাজারের রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল পদত্যাগ করেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র কেনেননি। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিবও মনোনয়নপত্র কেনেননি।

খুলনার ফুলতলার শেখ আকরাম হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তোলেন। কিন্তু ঋণখেলাপের কারণে বাতিল হয়ে যায়। তিনি উচ্চ আদালতে গেছেন। মেহেরপুর সদরের ইয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র আদালতেও বাতিল ঘোষিত হয়েছে।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শরীফ বাদশা পদত্যাগ করে বিএনএম থেকে নির্বাচন করছেন।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেও প্রত্যাহার করে নেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মো. নুরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। তবে ১ শতাংশ ভোটারের গরমিলের কারণে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়।