সুবিধা বেশি, ক্ষমতা বেশি, তাঁরা যেতে চান প্রশাসনে 

যে কারণে প্রশাসনে আগ্রহ

  • সহজে ও দ্রুত পদোন্নতি। 

  • উপসচিব হলে গাড়ি কিনতে বিনা সুদে ঋণ ও মাসে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। 

  • সরকারি সংস্থার প্রধান পদে নিয়োগ হয় সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার থেকে। 

  • বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও বেশি। 

সহজে পদোন্নতি পাওয়া যায় না। বিনা সুদের ঋণে গাড়ি কেনার সুযোগ নেই। বিদেশ ভ্রমণের সুবিধাও কম। ওদিকে এসব সুবিধা রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারে, সঙ্গে রয়েছে প্রভাব। তাই চারটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের ক্যাডার বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মিশে যেতে আগ্রহী। 

এই চার ক্যাডার হলো বাণিজ্য, তথ্য, সমবায় ও পরিসংখ্যান। ইতিমধ্যে বাণিজ্য ক্যাডার বিলুপ্তির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা দেখে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও দেনদরবার শুরু করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালে বিলুপ্ত হয়েছে অর্থনৈতিক (ইকোনমিক) ক্যাডার।

যদিও এসব বিশেষায়িত ক্যাডার গঠন করা হয়েছিল বিশেষ প্রয়োজনে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, বিশেষায়িত কাজের জন্য বিশেষায়িত ক্যাডার দরকার। সেই প্রয়োজন ফুরিয়েছে কি না, সেটা বড় কথা নয়, বিলুপ্ত হওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে ব্যক্তি স্বার্থে। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা সামনে আনছেন বঞ্চনাকে। 

যেমন বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিসংখ্যান ক্যাডারের বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে বেতনকাঠামোর ষষ্ঠ ধাপ (গ্রেড) থেকে অবসরে যেতে হয়। প্রশাসন ক্যাডারে এ ধরনের বৈষম্য নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে ক্যাডার একীভূত করা অথবা পরিসংখ্যান ক্যাডারের ওপরের দিকে পদ সৃজন করা। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, পরিসংখ্যান ক্যাডার প্রশাসনে একীভূত হলে পরিসংখ্যানের মান বজায় রাখা বাধাগ্রস্ত হবে।

বাণিজ্য ক্যাডার বিলুপ্তির বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। পরিসংখ্যান, তথ্য ও সমবায় ক্যাডারও মিশে যেতে চায় প্রশাসন ক্যাডারে। 

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ক্যাডারের সংখ্যা ২৬। এর মধ্যে ১০টি ক্যাডার পুরোপুরি সাধারণ, অর্থাৎ যেকোনো বিষয়ে পরে এই ক্যাডারে আসা যায়। পাঁচটি ক্যাডার সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত। ১১টি ক্যাডারে পুরোপুরি কারিগরি/পেশাগত। মানে হলো, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাই কেবল এই ক্যাডারে যেতে পারেন। যেমন চিকিৎসক ও প্রকৌশলী।

পিএসসি বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময় আগ্রহের ক্যাডার জানতে চায়। সাধারণত পরীক্ষার ফলে এগিয়ে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারে আগ্রহ বেশি দেখান। বিশেষায়িত বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট ক্যাডারে যান। সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসা, প্রকৌশলবিদ্যার মতো বিশেষায়িত বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে চলে যাচ্ছেন। পিএসসি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ৩৫তম থেকে ৪০তম (চিকিৎসক নিয়োগের ৩৯তম বাদে) বিসিএস পর্যন্ত ৫টি বিসিএসে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১ হাজার ৯৮০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্তত ৩৮৭ জন প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে আগেও চিকিৎসা ও প্রকৌশলবিদ্যায় পড়া কিছু কিছু শিক্ষার্থী যেতেন। তবে সম্প্রতি হারটি বেড়েছে। এর কারণ, ওই তিন ক্যাডারে সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা বেশি। 

নতুনেরা যেমন প্রশাসনে আগ্রহী, তেমনি বাণিজ্য, তথ্য, সমবায় ও পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারাও এখন প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করছেন। 

বিশেষায়িত ক্যাডার গঠন করা হয়েছিল বিশেষ প্রয়োজনে, লক্ষ্য নিয়ে। এসব ক্যাডার না থাকলে সেটা হবে দেশের জন্য বড় ক্ষতি।
আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

প্রশাসনে কেন আগ্রহ

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়ার আগ্রহের কারণ মোটা দাগে চারটি: ১. ওই ক্যাডারে গেলে পদোন্নতি পাওয়া সহজ। পদ না থাকলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হয়। যেমন জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিবের পদ আছে ৫০২টি, যদিও যুগ্ম সচিব রয়েছেন ৮৬৭ জন। 

২. উপসচিব হওয়ার তিন বছর পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ঋণ পান এবং সেই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা পান। উপসচিব পর্যায়ে ক্যাডার পরিবর্তনের সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০০টি পদের ৭৫টি প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ক্যাডারের জন্য ২৫টি। 

৩. প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই সাধারণত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রধান হন। এমনকি উচ্চমধ্যম পর্যায়ের পদেও লোক আসেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিজ সংস্থার শীর্ষস্থানীয় পদে যাওয়ার সুযোগ একেবারেই সীমিত। 

৪. প্রশাসন ক্যাডারে গেলে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ বেশি পাওয়া যায়, যা বাণিজ্য, তথ্য, সমবায় ও পরিসংখ্যান ক্যাডারে কম। 

জনপ্রশাসন নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থার প্রধানের কাজ নেতৃত্ব দেওয়া। সে ক্ষেত্রে দক্ষ, সৎ ও উদ্যোগীদের প্রেষণেও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে দক্ষতা ও সততা দেখে নিয়োগ হয় না। তিনি বলেন, পদায়ন নিয়মমাফিক না হওয়ায় সংস্থার অনেক নিজস্ব পদেও প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা সমীচীন নয়। এতে সংস্থার নিজস্ব জনবলের মনে ক্ষোভ জন্মে, দলাদলি সৃষ্টি হয় এবং কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিলুপ্তির পথে বাণিজ্য ক্যাডার

বাণিজ্য বিষয়ে সরকারি বিশেষায়িত কাজ ভালোভাবে করার লক্ষ্য নিয়ে চার দশক আগে বাণিজ্য ক্যাডারের যাত্রা শুরু হয়। সেটি এখন বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য ক্যাডারে এখন পদ আছে ৩২টি, কর্মরত আছেন ২০ জনের মতো। এই ক্যাডারেই এখন জনবল সবচেয়ে কম। যদিও নব্বইয়ের দশকে এই ক্যাডারে পদ ছিল ১১৬টি। 

সচিবালয়ে গত ২১ ডিসেম্বর এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় বাণিজ্য ক্যাডার বিলুপ্ত করে কর্মকর্তাদের প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন নাহার বেগমকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটির কাজ হবে বাণিজ্য ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করলে ভবিষ্যতে কী কী সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে, তা পর্যালোচনা করা। এরপর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

বাণিজ্য ক্যাডার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য নিয়ে কাজ করা নতুন নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেসব সংস্থায় বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া যেত। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন বাণিজ্য ক্যাডারকে বিলুপ্ত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি), প্রতিযোগিতা কমিশন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের মতো বাণিজ্য নিয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা রয়েছে। বাণিজ্য নীতি, শিল্পের সুরক্ষা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে কাজ করা ট্যারিফ কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ও তিন সদস্যের সবাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পদে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের, যাঁদের কাজ রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, নতুন পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদি।

জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এ তসলিম প্রথম আলোকে বলেন, শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, সবক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া দরকার। 

বিলুপ্তি চায় পরিসংখ্যান ক্যাডারও

পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্যাডারটিকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাবের জন্য একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছেন। তাতে বলা হয়, স্বাধীনতার পর দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অনুধাবন করা হয়েছিল। এ জন্য ১৯৭৪ সালে চারটি সরকারি দপ্তরকে একীভূত করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুনর্গঠন) আদেশের মাধ্যমে বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডার গঠিত হয়। এই ক্যাডার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার জন্য আন্তর্জাতিক মানের পরিসংখ্যান তৈরি করা। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এখন এই ক্যাডারে মোট পদ ১৬৯টি। কর্মরত আছেন ৯২ জন। ২০২০ সালে পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়া নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। সম্প্রতি বাণিজ্য ক্যাডার একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তের খবর জেনে তাঁরা আবার যোগাযোগ শুরু করেছেন।

পরিসংখ্যান ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা চাকরি শুরু করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) পরিসংখ্যান কর্মকর্তা হিসেবে। পরিসংখ্যান আইনে বলা আছে, বিবিএসের মহাপরিচালক ও উপমহাপরিচালক সরকার নিয়োগ দেবে। সরকার সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেয়। পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা সাধারণত পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকেন। ফলে শীর্ষ পদে যাওয়ার যোগ্যতা হয় না। এখন যে দুজন কর্মকর্তা বিবিএসের মহাপরিচালক ও উপমহাপরিচালক পদে রয়েছেন, তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারের। সংস্থাটির মহাপরিচালক পদে কখনো সরাসরি পরিসংখ্যান ক্যাডারের কেউ নিয়োগ পাননি। উপমহাপরিচালক পদে শুধু একজন পেয়েছিলেন।

২০১৮ সালে বিলুপ্ত হওয়া অর্থনৈতিক ক্যাডার গঠন করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। তাদের কাজ ছিল সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি ও তদারক করা। ক্যাডারটি বিলুপ্তির পর এখন পরিকল্পনা কমিশন, প্রকল্প তদারকের দায়িত্বে থাকা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগে প্রকল্প তৈরির কাজে বিশেষায়িত ক্যাডারের কর্মকর্তা নেই। দেখা যাচ্ছে, এখন প্রকল্প তৈরি, তদারকি ও বাস্তবায়নের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

প্রশাসনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্যাডারের মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তিনি। জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষায়িত ক্যাডারটি গঠন করা হয়েছিল বিশেষ একটি কাজের জন্য। এক যুগ আগে দেশে এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) আকার ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এখন তা আড়াই লাখ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়বে। তখন এই ক্যাডারের চাহিদা আরও বাড়বে। কিন্তু ক্যাডারটি বিলুপ্ত হয়ে গেল। 

তথ্য ও সমবায় ক্যাডার যা বলছে

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তথ্য ক্যাডার প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করছে ২০১২ সাল থেকে। তখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। কিন্তু একীভূত হওয়ার কাজটি এগোয়নি। পরে ২০১৯ সালে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। এখন আবার তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা জনপ্রশাসনে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তথ্য ক্যাডারে পদ আছে ৩০৪টি, কর্মরত আছেন ২১২ জন। 

তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মাসের শুরুতে তথ্য ক্যাডারের একটি প্রতিনিধিদল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে একীভূত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলে এসেছে। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, তথ্য ক্যাডারে পদোন্নতি কম হয়। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যায় না। ক্যাডারটি বঞ্চনার শিকার। 

সমবায় ক্যাডারে পদ আছে ১৯৬টি। কর্মরত রয়েছেন ১১৭ জন। সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান পদ নিবন্ধক ও মহাপরিচালক। এ পদে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন ৫০ জন। সবাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। প্রশাসনে যেতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সমবায় অধিদপ্তর যুগ্ম নিবন্ধক মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বঞ্চনা থেকে মুক্তি চাই।’

বিশেষায়িত ক্যাডার থাকা ‘দরকার’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো ক্যাডার নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের নতুন প্রেক্ষাপটে কী কী ক্যাডার দরকার, কী কী ক্যাডার নতুন করে গঠন করা দরকার, সেই পর্যালোচনা হওয়া উচিত সমন্বিতভাবে।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষায়িত ক্যাডার গঠন করা হয়েছিল বিশেষ প্রয়োজনে, লক্ষ্য নিয়ে। এসব ক্যাডার না থাকলে সেটা হবে দেশের জন্য বড় ক্ষতি।