চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে জরুরি সেবা চলছে স্বল্প পরিসরে, দুর্ভোগে রোগীরা

ছেলেকে কোলে নিয়ে চিকিৎসার আশায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এসেছেন এই বাবাছবি: আহমেদ ইউসুফ

এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সীমিত পরিসরে চালু হয়। তবে জরুরি সেবার বাইরে বাড়তি চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন অনেক রোগী।

আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে প্রায় অর্ধশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন।

জরুরি বিভাগে সেবা চালুর পর এই রোগীরা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সেবা বন্ধ থাকায় অনেক রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরতে হচ্ছে।

ঢাকার বছিলার একটি বাসায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন মো. জসীম উদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর শিশুসন্তান ইমাম হোসেনের জ্বর হয় এবং বাঁ চোখ অস্বাভাবিক ফুলে যায়। দ্রুত চিকিৎসার আশায় তিনি গত শুক্রবার ইমাম হোসেনকে নিয়ে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এখানে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা ছাড়া তেমন সেবা পাননি জসীম।

জসীম উদ্দিন জানান, তাঁর ছেলের চোখের বেশ কিছু পরীক্ষা দরকার। কিন্তু চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের বেশির ভাগ সেবা বন্ধ থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁদের অন্য কোথাও গিয়ে চোখের পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। জসীম উদ্দিন তাঁর সন্তানকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শিশু হাসপাতাল ঘুরে পরীক্ষা করাতে পারেননি। এখন তিনি অপেক্ষা করছেন চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে সেবা পুরোপুরি সচল হওয়ার জন্য।

জসীম উদ্দিন বলেন, ‘শিশু হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাচ্চা মেশিন দেখলে কান্নাকাটি শুরু করে। অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে না পেরে এখানে আবার ফেরত এসেছি। বেসরকারি কোনো হাসপাতালে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। অনেক খরচ। এখানে পরীক্ষা করাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। এ অবস্থায় বাচ্চার চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরুরি বিভাগে এ মুহূর্তে প্রায় অর্ধশত রোগী আছেন। যাঁদের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে। আরও অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা আরও পাঁচজন সাধারণ রোগী ও জুলাই আহত ব্যক্তিদের পাঁচজন বিশেষায়িত ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তবে জুলাই আহত রোগীদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করা যায়নি। হাসপাতালের চতুর্থ তলার বিশেষায়িত ওয়ার্ডের ফটকে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে তাঁরা অবস্থান করছেন।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আপাতত জরুরি সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। সংকট নিরসন করে আগামী শনিবার থেকে সব সেবা চালুর চেষ্টা করছি।’

হাসপাতালে চিকিৎসার অপেক্ষায় রোগীরা
ছবি: আহমেদ ইউসুফ

জানে আলম জানান, জুলাই আহত ব্যক্তিদের কতজন রোগী ভর্তি আছেন, সে সংখ্যা তাঁরা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। আহত এসব রোগী বিশেষায়িত ওয়ার্ডের ফটকে তালা দিয়ে ভেতরে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল তাঁরা পাঁচজনের খাবার নিয়েছেন। কিন্তু ভেতরে ঠিক কতজন অবস্থান করেছেন, তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না।’

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জরুরি বিভাগে স্বল্প পরিসরে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
ছবি: জাহিদুল করিম

সকাল আটটা থেকে হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসছেন। কিন্তু জরুরি বিভাগে সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।

রাজবাড়ী থেকে আসা মো. লিয়াকত শিকদার জানান, চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ায় তিনি এখানে এসেছেন। কিন্তু জরুরি বিভাগে গেলে তাঁকে শনিবার আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন আবদুল মান্নান। তাঁর বয়স ৭০ বছর। সকাল থেকে তিনি হাসপাতালের ফটকে বসে আছেন। আবদুল মান্নান জানান, বেশ কিছুদিন থেকে তাঁর ডান চোখ একদিকে টান লাগে। তীব্র ব্যথায় তাঁর মুখ ডান দিকে বাঁকা হয়ে আসে। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে আজ তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি।

জরুরি বিভাগের নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একান্ত জরুরি ছাড়া অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ এ জন্য অনেক রোগী ফেরত যাচ্ছেন। সেবা পুরোপুরি চালু হলে সব রোগী আবারও চিকিৎসা পাবেন। বহির্বিভাগে যেসব রোগীর চিকিৎসা প্রয়োজন, তাঁদের প্রায় সবাই ফেরত যাচ্ছেন।

আজও হাসপাতালে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। নূর আলম নামের একজন আনসার সদস্য বলেন, হাসপাতালের জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সেবা এখনো বন্ধ আছে। জরুরি প্রয়োজন না হলে রোগীদের শনিবার আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।