বাংলাদেশ–ইইউ রাজনৈতিক সংলাপ
অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তিতে আগ্রহী দুই পক্ষ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশের অবস্থানকে সম্মান করে ইইউ।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখে সহযোগিতাকে পরের ধাপে নিতে অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) সই করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ চুক্তিতে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, অন্তর্জাল নিরাপত্তাকাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার মতো উপাদান থাকবে। আর নতুন এ আইনি কাঠামোর ভিত্তি হবে মানবাধিকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এনরিকে মোরা বলেন, ‘আমরা দুটি কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছি। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি এবং অর্জন। এ জন্য আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাইছি। অন্যটি হচ্ছে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ও কৌশল হচ্ছে, এখানে আরও বড় পরিসরে অবস্থান নেওয়া। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়াতে চাই।’
এনরিকে মোরার মতে, বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার যে কাঠামো রয়েছে, সেটির পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। কারণ, বাংলাদেশ এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যে ওই সহযোগিতার কাঠামোর মধ্যে যেসব উপাদান রয়েছে, সেগুলোর বাইরেও বিভিন্ন বিষয় চলে আসছে। ফলে পরের ধাপে উন্নীত হওয়ার কাঠামো হচ্ছে অংশীদারত্ব চুক্তি। এ আইনি কাঠামোর মধ্যে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে হবে এবং সেটি অংশীদারত্বের স্তরে নিতে হবে। এটি করতে গেলে একটি চুক্তি সই করতে হবে। অংশীদারত্ব চুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে, এটি আমি বলতে পারব না। তবে আমরা ৫০ বছর পূর্তির যে আবহ রয়েছে, সেটির মধ্যে এটি করতে চাই।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করব। এর একটি আলোচনার প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের যে ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যাত্রা রয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিলে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে।’
নিরাপত্তা সহযোগিতা
নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে শাহরিয়ার আলম ও এনরিকে মোরার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা সহযোগিতার মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা, অন্তর্জাল নিরাপত্তা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, খাদ্য, শান্তিরক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যে ঝুঁকির মুখে পড়বে, সেটি মোকাবিলার জন্য বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ইইউর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় ইইউ। মোরা বলেন, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের এ যাত্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, এ অঞ্চলে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এটি করার জন্য এ অঞ্চলে অবাধে চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পরে সব দেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন বিশ্বে বাস করছে। এ মুহূর্তে যারা জাতিসংঘ নীতিতে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যে অংশীদারত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এনরিকে মোরা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশ নিজের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে ভোট দিয়েছে। এ সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে ইইউ সম্মান করে। বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমরা সেটিকে বাতিল করতে পারব না। আমরা যেটি করতে পারি, সেটি হচ্ছে, নীতি নিয়ে আলোচনা। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আমরা অন্য দেশকে একটি অবস্থান নেওয়ার জন্য বলব না। আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।’