ইতিহাসের সাক্ষী কল-রেডি

কলরেডি মাইক সার্ভিস
কলরেডি মাইক সার্ভিস

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ‘কল-রেডি’ মাইক সার্ভিসের মাইকে ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর গতকাল শনিবার সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে কল-রেডির মাইকেই ভাষণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘কল-রেডি’ নামটি এক কথায় বাংলার ইতিহাসের সাক্ষী। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সভা-সমাবেশেও কল-রেডির মাইকে বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ কল-রেডির মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ছাড়া কল-রেডি মাইকে বক্তব্য দিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অনেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিদেশের নেতাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি কল-রেডি মাইক্রোফোনে ভাষণ দেন।

এখনো ঢাকায় কল-রেডির ডাক পড়ে। মাইক শব্দটি কানে এলেই সবার মনে পড়ে কল-রেডির কথা। পুরান ঢাকার ৩৬ ঋষিকেশ দাস লেনে রয়েছে কল-রেডির আদি কার্যালয়। বর্তমানে কল-রেডির মালিকসহ ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।

জানতে চাইলে কল-রেডির অন্যতম স্বত্বাধিকারী সাগর ঘোষ বলেন, ভালো সেবা দেওয়ার সুনাম থাকায় যেকোনো সভা-সমাবেশ, সামাজিক ও ধর্মীয় বড় বড় অনুষ্ঠানে কল-রেডির ডাক পড়ে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রতিটি বড় সভা-সমাবেশে তাদের ডাকা হয়। গতকাল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রায় ৪০০ মাইক লাগিয়েছে কল-রেডি। তিনি বলেন, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে কল-রেডির যে মাইক্রোফোনে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মাইক্রোফোন, মাইক্রোফোনের স্ট্যান্ড আজও কল-রেডিতে সংরক্ষণ করা রয়েছে।

১৯৪৮ সালে দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। ওই বছর বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার মঠবাড়িয়া গ্রামের দুই ভাই হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষ পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ‘লাইট হাউস’ নামের একটি আলোকসজ্জার দোকান চালু করেন। আলোকসজ্জার পাশাপাশি গ্রামোফোনও ভাড়া দেওয়া হতো। সভা-সমাবেশ ও বিয়ে-শাদিতে গ্রামোফোন ভাড়া নিত লোকজন। এভাবে অল্প দিনেই দোকানটি পরিচিত হয়ে ওঠে। চাহিদা বাড়তে থাকায় পরে বিদেশ থেকে মাইকের ইউনিট কিনে আনেন দুই ভাই। তাতেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছিল না। হরিপদ ঘোষ মাইক তৈরি করতে জানতেন। পরে যন্ত্রপাতি কিনে নিজেই কয়েকটি মাইক তৈরি শুরু করেন।

লাইট হাউস থেকে কল-রেডির নামকরণের বিষয়ে হরিপদ ঘোষের ছেলে সাগর ঘোষ বলেন, মাইক ভাড়া দেওয়ার জন্য লাইট হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব সময়ই প্রস্তুত থাকতেন, যাতে কেউ ডাকলেই আমরা রেডি থাকি। এক কথায়, কল করলেই রেডি। পরে দয়াল ঘোষ নিজে থেকেই ‘কল-রেডি’ নামটি ঠিক করেন। বর্তমানে হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষের ছেলেরা এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।