নাসিরনগরে ১৫ মন্দির ভাঙচুর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে সদর থানার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে হবিগঞ্জের মাধবপুরেও দুটি মন্দির এবং কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর একটি পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এ অভিযোগে নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসুরাজ দাস (৩০) নামের এক যুবককে শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর দাবি, তাঁর ফেসবুক পেজে ঢুকে অন্য কেউ ওই পোস্ট দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ধর্মীয় অবমাননার প্রতিবাদে গতকাল সকালে স্থানীয় ডিগ্রি কলেজ মোড়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রিয়াজুল করিমের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় খেলার মাঠে খাঁটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, ওই দুই সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজনই সমাবেশ শেষে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। কেননা, হামলাকারীরা ছিল অপরিচিত। হামলায় গৌরমন্দিরের সেবায়েত সংকর সেন (২৮) গুরুতর আহত হন। তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ছয়জনকে আটক করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থানার আশপাশে দত্তপাড়া, পূর্বপাড়া, গাঙ্গলপাড়া, কাশিপাড়া, নমঃশূদ্রপাড়া, সূত্রধরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মালিপাড়া, শিলপাড়া ও ঘোষপাড়া¬ এলাকার পাঁচটি সর্বজনীন ও ১০টি পারিবারিক মন্দিরের কালীপূজার প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ওই সব এলাকার শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন।
গৌরমন্দির কমিটির সদস্য সুজন দেব, প্রত্যক্ষদর্শী নগেন্দ্র চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, মন্দির থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও পূজার উপকরণ লুট করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রিয়াজুল করিম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। আমাদের সমাবেশে প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের লোকজন উপস্থিত ছিল।’
খেলার মাঠের সমাবেশে উপস্থিত খাঁটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের উপজেলা শাখার প্রচার সম্পাদক মুফতি ইসহাক আল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ থেকে হামলা বা ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে এই হামলা হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মামলা করতে বলা হয়েছে।
নাসিরনগরের ঘটনার জের ধরে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা সদরে গতকাল বিকেলে দুটি মন্দিরে হামলা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবরিনা আলম জানান, ভাঙচুরের ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।