হাত না পেতে কর্মোদ্যমী হয়ে উঠতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবসমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থেকে নিজস্ব মেধা ও মনন কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি ও পরিবারিক জীবন সুন্দর করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কাছে হাত পাতব না; আত্মমর্যাদাশীল ও কর্মোদ্যমী হয়ে উঠব।’
জাতীয় যুব দিবস উপল‌ক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যুবক, যা পৃথিবীর অনেক দেশেরই নেই। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পূর্ণ সদ্ব্যবহারকল্পে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্তকরণের বিকল্প নেই।’ তিনি এ সময় যুবসমাজকে ‘দেশের প্রাণ এবং উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার চালিকা শক্তি’ বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের যুবশক্তি কোনোভাবেই বিপথে যাক এবং তাদের অভিভাবকদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াক। তাদের অবশ্যই মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো কোনো সুস্থধারা নয়, এগুলো সব সময়ই যুবসমাজের সুন্দরভাবে বিকাশের অন্তরায়।’

এ বছরের জাতীয় যুব দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আত্মকর্মী যুবশক্তি, টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি’ যথোপযুক্ত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত পদ‌ক্ষেপের ফলে দেশে যুব জাগরণ ঘটেছে। বিশেষ করে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব জেলায় যুবদের জন্য একই ধরনের প্রশিক্ষণ অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন করে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে এবং বিদ্যমান প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটায় ২০০৯ সালে সারা দেশে পলিটেকনিকে ভর্তির আসন ছিল যেখানে মাত্র ২৫ হাজার, বর্তমানে তা ১ লাখ ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬২ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৯ জনকে ১ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রশি‌ক্ষিত যুবদের মধ্যে ২০ লাখ ২১ হাজার ১০৩ জন আত্মকর্মে নিয়োজিত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবদের অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত একজন যুবক-যুব নারী প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা কর্মভাতা পেয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ২৮টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ সমাপনকারীর সংখ্যা মোট ১ লাখ ১১ হাজার ১১৬। কর্মসংস্থানপ্রাপ্তদের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮২। অস্থায়ী কর্মসংস্থান শেষে অনেকে স্থায়ী কর্মসংস্থান কিংবা আত্মকর্মী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

এ ছাড়া, যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সৃষ্টিসহ দেশব্যাপী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, বিদেশে গমনেচ্ছু তরুণ-যুবদের জন্য টেকনিক্যাল ট্রেনিং, দেশের বিদ্যালয়গুলোতে ভোকেশনাল ট্রেনিং কর্মসূচি চালু এবং শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রকে সেন্টার অব অ্যাক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলায় সরকারের পদ‌ক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জনকে জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত করেন।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।