তদন্ত কমিটি গঠন, আরও বাঁশের ব্যবহার

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ভবনে টাইলস উঠে বাঁশ বের হওয়ার ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই বাঁশ গতকাল মঙ্গলবার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল সকালে গিয়ে ওই জায়গার ওপরের দিকে আরও বাঁশের ব্যবহার দেখা গেছে।
নির্মাণ কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, ভবনের মূল নির্মাণকাজের সঙ্গে এই বাঁশ যুক্ত নয়। প্রায় পাঁচ বছর আগে তৈরি ভবনের পিলার থেকে এখনই টাইলস খুলে পড়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ভবনের নির্মাণকাজে বাঁশের ব্যবহারের বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান করা হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোসাদ্দেক হোসেনকে। সদস্যসচিব করা হয়েছে রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলামকে এবং সদস্য করা হয়েছে রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের বৈদ্যুতিক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাফিজ মাহমুদকে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে।
গতকাল সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেরিয়ে পড়া বাঁশের বাতাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে করে তৃতীয় তলার লিফট ও মূল ভবনের মেঝের মধ্যে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়। লিফটের দরজায় দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে চোখ রেখে দেখা যায়, সেখানেও একইভাবে বাঁশের বাতার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভবনের আরও কত জায়গায় এ রকম বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে মিস্ত্রি দিয়ে বাঁশ তুলে ওই জায়গা প্লাস্টার করা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের নির্মিত চারতলাবিশিষ্ট এই ভবনের নির্মাণ ব্যয় হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তর এই ভবন নির্মাণ করে। এর ঠিকাদার ছিল ‘মার্ক বিল্ডার’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
গতকাল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, মাসুম আল হাসান, আবু হেলাল আনসারী ও নাফিজ মাহমুদ ভবনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় লতিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি বড় ধরনের কোনো সমস্যা নয়। মূল ভবনের সঙ্গে লিফট স্থাপনের সময় কিছুটা স্থান ফাঁকা ছিল। এই স্থানটিতে প্লাস্টার করে টাইলস বসানোর জন্য বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। মূল নির্মাণকাজের সঙ্গে এই বাঁশের কোনো সম্পর্ক নেই।’
ভবন নির্মাণ শিডিউলে বাঁশ ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে কি না জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমান উল্লাহ বলেন, বাঁশ নয়, ওখানে স্টিলের একটা পাত দিলেই হতো। বিষয়টি কেন প্রকৌশলীরা দেখে নেননি—জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলীরা এটা দেখে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ভবন নির্মাণকাজের সময় তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলী রাজশাহীতে দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম দিকে ছিলেন মিহির কান্তি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি মাত্র দুটি মেঝের করার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরে অন্যত্র বদলি হয়ে যান। পরে তাঁর জায়গায় আসেন এ এন এম গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘আমি এখন অবসরে রয়েছি। কিছুই মনে করতে পারছি না।’ ভবন হস্তান্তরের সময় দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ ফজলুল হক। গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে তাঁর মুঠোফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হলে একজন নারী ফোনটা ধরে বলেন, এটা ফজলুল হকের নম্বর নয়। প্রকৌশলীরা কেউ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নম্বর দিতে পারেননি।