ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা আদায়

ইয়াসিন মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ
ইয়াসিন মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক প্রায় চার মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন।
নিখোঁজ ওই ব্যক্তির নাম ইয়াসিন মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ (৩৫)। তাঁকে গত ১৪ জুলাই দুপুরে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির খুব কাছাকাছি বনানী রেলস্টেশনের সামনে থকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তাঁর মা চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন অভিযোগ করেন।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী ডিওএইচএসে ইয়াসিনদের নিজেদের বাড়ি। বাবা মারা গেছেন, তিনি চিকিৎসক ছিলেন। মা সুরাইয়া পারভীন তালুকদারও চিকিৎসক। তিনি ছেলেকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে ওই দিনই ভাষানটেক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
জিডিতে বলা হয়, ইয়াসিন তাঁর ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যাওয়ার জন্য ১৪ জুলাই ১১টা ২৫ মিনিটে বাসা থকে বের হন। ইয়াসিন নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি বনানী রেলস্টেশনের ঠিক সামনে দাঁড়ান। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় চাচাতো ভাই সিদ্রাত মুহাম্মদকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। সিদ্রাত সময়মতো না আসায় ১১টা ৩৯ মিনিটে ইয়াসিন ফোন করেন। সিদ্রাত বনানী ১১ নম্বর সড়কে আছেন এবং ১০ মিনিটের মধ্যে ইয়াসিনের কাছে পৌঁছে যাবেন বলে জানান। ১১টা ৪২ মিনিটে সিদ্রাত আবার ইয়াসিনের কাছ থেকে ফোন পান। ফোন ধরে সিদ্রাত তর্কবিতর্ক ও চিৎকারের শব্দ শুনতে পান। কিন্তু ইয়াসিন ফোনে কিছু বলার সুযোগ পাননি। তিন মিনিট পর ইয়াসিনের ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন ইয়াসিন নেই, তাঁর গাড়িটি পড়ে আছে।
জিডিতে বলা হয়, তখন বনানী রেলস্টেশনের এক টিকিট বিক্রেতা সিদ্রাতকে জানান যে ইয়াসিনের গাড়ির পাশে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। সাধারণ পোশাক পরা একজনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির পর তাঁরা তাঁকে মাইক্রোবাসটিতে তুলে নিয়ে যান।
ইয়াসিনের মা সুরাইয়া পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ইয়াসিন নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর রাত পৌনে ১২টার দিকে দুই ব্যক্তি যান ওই বাসায়। তাঁরা নিজেদের র্যাবের কর্মকর্তা পরিচয় দেন এবং সদর দপ্তর থেকে এসেছেন বলে জানান। নাম বলেছেন, মেজর নাহিদ ও মেজর মাসুদ। তাঁরা র্যাবের পরিচয়পত্রও দেখান। তারপর তাঁদের বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়। এরপর ওই দুই কর্মকর্তা পুরো বাড়ি তল্লাশি করেন এবং ইয়াসিনের বইপত্র ঘেঁটে দেখেন। যাওয়ার সময় তাঁরা ইয়াসিনের দুটি ল্যাপটপ ও তাঁর মায়ের ল্যাপটপ এবং একটি কম্পিউটারের সিপিইউ নিয়ে যান।
সুরাইয়া পারভীন বলেন, ইয়াসিন নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একজন পরিদর্শক তাঁর বাসায় গিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছিলেন।
এ বিষয়ে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার (তদন্ত ও পরিচালন) আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ভাষানটেক থানায় করা জিডির সংবাদ পেয়ে তাঁরা খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। তখন পরিবার জানায়, অন্য কোনো সংস্থার লোকজন ইয়াসিনকে তুলে নিয়ে গেছেন। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে আর অনুসন্ধান করেননি।
ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়: নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইয়াসিনের এক নিকটাত্মীয় প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীতে খোঁজ করে ইয়াসিনের কোনো হদিস না পেয়ে তাঁরা ভড়কে যান। এরপর ১ আগস্ট মো. ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল মিস্ত্রি এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন ইয়াসিনের মায়ের কাছে। লম্বা, স্বাস্থ্য ভালো, ছোট দাড়িওয়ালা ওই ব্যক্তি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সোর্স’ বলে পরিচয় দেন। তবে তিনি নিজের নাম এবং কোন বাহিনী বা সংস্থার সোর্স তা প্রকাশ করেননি। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন লোক ছিলেন। কথিত ওই সোর্স দাবি করেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে অনেককেই টাকার বিনিময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। ইয়াসিনকেও তিনি দেখে এসেছেন। তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। ২ কোটি টাকা দিলে ১৫ দিনের মধ্যে তিনি ইয়াসিনকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারবেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ২০ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। দর-কষাকষি শেষে ৩০ লাখ টাকায় রাজি হন সোর্স। ওই দিনই তাঁকে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। তখন ইয়াসিনের নিকটাত্মীয়দের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ইয়াসিনের নিকটাত্মীয়রা জানান, এরপর ৫ আগস্ট পর্যন্ত ওই সোর্স আরও তিনবার এসে নিয়ে যান আরও ১০ লাখ টাকা। মোট ২৫ লাখ টাকা নেওয়ার পর একদিন এসে ওই ব্যক্তি (সোর্স) কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নয়জন নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে সুরাইয়া পারভীনকে ভয় দেখান যে তাঁর ছেলের ভাগ্যেও এমনটা ঘটতে পারে। সেটা ঠেকাতে ৩০ লাখে হবে না, ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর ৮ আগস্ট ওই সোর্সকে ২০ লাখ টাকা দেন ডা. সুরাইয়া। এই টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা তিনি সোনালী ব্যাংক বনানী শাখা থেকে তুলেছিলেন, তখন ওই সোর্সও সঙ্গেই ছিলেন। তিনি ব্যাংকের ভেতরেই টাকা গ্রহণ করেন, যা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। এরপর ১৪ আগস্ট আরও ৫ লাখ টাকা ব্যাংকের ওই শাখা থেকে তুলে ব্যাংকের ভেতরেই ওই সোর্সকে দেওয়া হয়।
এরপর আড়াই মাসের বেশি সময় পার হয়েছে, ছেলেকে আর ফিরে পাননি সুরাইয়া পারভীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুরো টাকা দেওয়ার পর ওই সোর্স আর ফোন ধরেন না।
কোন বিশ্বাসে অচেনা লোককে এত টাকা দিলেন—এ প্রশ্নের জবাবে ইয়াসিনের মা বলেন, ‘ছেলের খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারলাম সোর্সকে ধরে অনেকে লোকজনকে ছাড়িয়ে আনছে। এরই মধ্যে ইকবাল মিস্ত্রির মাধ্যমে এই সোর্সকে পেয়ে আশার আলো দেখতে পাই।’ তিনি বলেন, বনানী ডিওএইচএস এলাকায় বাড়ি নির্মাণের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করেন ইকবাল। সেই সুবাদে অনেক দিন ধরে তাঁকে চেনেন।
মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুরের কালশী এলাকায় মুজিব নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই মুজিব তাঁকে জানান যে তাঁরা টাকার বিনিময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক লোকজনকে ছাড়িয়ে আনার কাজ করেন। পরিচিত এমন ঘটনা থাকলে তাঁদের কাছে আনতে। সেই সুবাদে তিনি মুজিবের বিষয়টি ইয়াসিনের পরিবারকে জানান।
ইকবাল দাবি করেন, ওই মুজিব ও তাঁর সঙ্গে আসা আরও দুজনকে তিনি ইয়াসিনের পরিবারের কাছে নিয়ে যান, এরপর তিনি আর কিছু জানেন না। মুজিব ছাড়া অন্য দুজনকে তিনি চেনেন না।
ইকবালের কাছ থেকে মুজিবের মুঠোফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোনটি বন্ধ রয়েছে।
ইয়াসিনের স্বজনেরা জানান, ওই কথিত সোর্স যতবার টাকা নিতে এসেছিলেন, প্রতিবার একই গাড়িতে আসেন। তাঁরা ওই গাড়ির নম্বর (ঢাকা মেট্রো-গ-২৩-১৫৮৮) টুকে রাখেন। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ওই গাড়ির প্রকৃত মালিক আবদুল বাতেন। তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁর গাড়িটি ভাড়ায় খাটান। আলম নামে এক ব্যক্তি তাঁর গাড়ি নিয়মিত ভাড়া নেন। আগস্ট মাসেও তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন।
ইয়াসিনের স্বজনেরা কথিত ওই সোর্সের যে শারীরিক কাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন, সেটা বাতেনের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী আলমের সঙ্গে মিলে যায়। বাতেন বলেন, তিনি গাড়িচালকের কাছ থেকে জেনেছেন, আলম বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি করেন। এ ছাড়া একটা বাড়ি নির্মাতা কোম্পানির সঙ্গেও কাজ করেন। থাকেন মিরপুর ৬ নম্বরে।
ওই বাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ওই ব্যক্তির নাম হাজি আলম। তিনি সেনানিবাস এলাকায় একটি বড় ঠিকাদারির কাজ পাবেন বলে জানান। এ জন্য আলম ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘লজিস্টিক’ সহায়তার জন্য এসেছিলেন।
আলম নামের এই ব্যক্তির দুটি মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করা হলে একটি ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ওই নম্বর দিয়ে ইয়াসিনের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। অপর নম্বরে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টার পর তিনি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোন ধরেন। নাম হাজি আলম কি না, জানতে চাইলে তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। এরপর তিনি এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। এরপর ইয়াসিনের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গটি তুললে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর গত দুই দিন তিনি আর ফোন ধরেননি।
এদিকে ইয়াসিনের নিখোঁজের বিষয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন গত ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেছে, ইয়াসিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কিছু দোকানদার ও পথচারী দেখেছেন। হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেছেন, যাঁরা ইয়াসিনকে তুলে নিয়ে গেছেন, তাঁরা নিয়মিতই ওই এলাকায় গ্রেপ্তার করে থাকেন এবং তাঁরা ডিবি বা র্যাবের সদস্য।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘র্যাব কাউকে গ্রেপ্তার করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে এবং আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়। ইয়াসিনকে যদি ধরতাম, তাহলে একইভাবে আদালতে হাজির করা হতো।’
র্যাবের দুজন কর্মকর্তা ইয়াসিনের বাসায় গিয়ে তল্লাশি চালান এবং তাঁর ল্যাপটপ নিয়ে আসেন এটা জানালে এ বিষয়ে মুফতি মাহমুদ কিছু বলেননি। তবে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ রকম অনেক প্রতারক চক্র আছে, যারা এ কাজগুলো করে থাকে। সে রকম কোনো চক্র হয়তো কাজটি করেছে।
জিডির অগ্রগতি নেই: এদিকে ইয়াসিনের নিখোঁজের বিষয়ে করা জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াসিনকে যে জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর মা অভিযোগ করেছেন, সে জায়গাটি মূলত বনানী থানার আওতাধীন। তিনি জিডি করতে ভাষানটেক থানায়ই এসেছিলেন। অভিযোগও লিখেছিলেন। মহিলা অনেক বয়স্কা হওয়ায় তাঁকে আর বনানী থানায় না পাঠিয়ে আমি নিজেই সেটি বনানী থানায় পাঠাই। বিষয়টি বনানী থানায় তদন্তাধীন।’
বনানী থানার ওসি পি এম ফরমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, জিডিটি তাঁদের থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করছেন। এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে। এখনো বলার মতো তথ্য তাঁদের কাছে নেই।
৬৭ বছরের সুরাইয়া পারভীনের একমাত্র মেয়ে লন্ডনপ্রবাসী। ছেলে নিখোঁজ। তিনি বাসায় একা থাকেন। কয়েকজন কর্মচারী আছেন। মাঝেমধ্যে অন্য আত্মীয়রা এসে খোঁজখবর নেন। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী পাঁচ বছরের সন্তান নিয়ে থাকছেন নিজের বাবার বাড়িতে।
সুরাইয়া পারভীন বলেন, ইয়াসিন ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমে ও লেভেল, এ লেভেল পাস করেন। এরপর লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশলে স্নাতক পাস করেন। তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ স্নাতকোত্তর ছাড়াই তাঁকে সরাসরি পিএচডির জন্য বৃত্তি দেয়। এরই মধ্যে ২০০৫ সালের শেষের দিকে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন ইয়াসিন।
সুরাইয়া পারভীন বলেন, ওই ছিনতাইয়ের ঘটনার পর তাঁর ছেলের মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তখন থেকে ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। একপর্যায়ে পিএইচডি বাদ দিয়ে ২০০৬ সালে দেশে চলে আসেন ইয়াসিন। ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে ঘুরে জুমার নামাজ পড়তেন, ইমামদের বয়ান শুনতেন। ইয়াসিন বনানীর দুটি কোচিং সেন্টারে এবং নিজের বাসায় এ-ও লেভেলের ছাত্র পড়াতেন। ইয়াসিনের স্ত্রী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে আছে।
সুরাইয়া পারভীন বলেন, তিনি শুনেছেন শাহবাগ থানার একটি মামলায় তাঁর ছেলের নামও রয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে করা ওই মামলায় আসামির তালিকায় গুলশানে হামলায় নিহত নিবরাস ইসলামের নামও আছে। তাই সুরাইয়া পারভীনের ধারণা, তাঁর ছেলেকে জঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাঁর ছেলে ধর্মপ্রাণ, তবে জঙ্গিবাদের মতো হিংস্র কোনো কাজে যুক্ত নন।
গতকাল ভারতভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার ডট ইনে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে ইয়াসিন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আটক রয়েছেন। হাইকমিশন থেকে আইনি সহায়তার (কনস্যুলার এক্সেস) বিষয়ে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করে আসছেন।
এ বিষয়ে গতকাল ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলে একজন মুখপাত্র প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের বিষয়ে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে পারেন না। বিষয়টি লিখে তাঁদের ই-মেইল করলে তাঁরা সেটি লন্ডনে পাঠান। সেখান থেকে উত্তর এলে তাঁরা উত্তর দিতে পারেন। তিনি বলেন, দ্য ওয়্যার ডট ইন যদি হাইকমিশনকে উদ্ধৃত করে থাকে, তবে হাইকমিশন থেকেই তাঁদের নিশ্চিত করা হয়েছে।