১৬টি বাড়ি ১৩টি দোকান বিলীন

পদ্মার ভাঙনে ঢাকার দোহার উপজেলার বাহ্রা বাজারে একটি ভবন ধসে গেছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো
পদ্মার ভাঙনে ঢাকার দোহার উপজেলার বাহ্রা বাজারে একটি ভবন ধসে গেছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ঢাকার দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ও নারিশা ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে ১৬টি বসতবাড়ি ও ১৩টি দোকান বিলীন হয়েছে। নদীর তীরে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দিয়েও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, গত দুই দিনের টানা বর্ষণে নয়াবাড়ি ও নারিশা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াবাড়ির বাহ্রা গ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মায় প্রবল স্রোত। ভাঙনের আতঙ্কে বাহ্রা গ্রামের অনেকে মালামালসহ বসতঘর খুলে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছেন। গ্রামের বাসিন্দা মো. আসলাম (৫২) বলেন, পদ্মার তীরে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তাঁর ৫৫ শতাংশ জমি ছিল। নদীতে ভেঙে এখন মাত্র ১০ শতাংশ আছে। এখানে তিনি দুটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে বাস করছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে পদ্মার ভাঙন শুরু হওয়ায় এখন আতঙ্কে আছি। শেষ সম্বলটুকু হয়তো পদ্মায় চলে যাবে। প্রশাসনের উচিত অতিসত্বর ভাঙন রোধ করা।’
বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের চত্বরে বাহ্রা জামে মসজিদ, নুরিয়া আশ্রাফিয়া মাদ্রাসা ও আমাদের বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পদ্মাতীরের ৫০ গজের মধ্যে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে যদি ভাঙন রোধ করা না যায়, তবে প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙনের কবলে পড়বে।’ জানা গেল, দুই দিন ধরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনের অংশে পদ্মাতীরে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভাঙন থামেনি।
বাহ্রা বাজার এলাকার চা-দোকানদার আবুল হাসেম বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক ধরে পদ্মার ভাঙন শুরু হওয়ায় আমাদের বাজারের একতলা পাকা মার্কেটটি ধসে যায়। এতে আটটি দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী সালেহা আক্তার (৫০) বলেন, ‘আমার শ্বশুরের ১০৪ শতক জমি ছিল। কয়েক বছর ধরে নদীভাঙনে প্রায় ৮০ শতক জমি নদীতে চলে গেছে। অবশিষ্ট জমির ৫ শতাংশে টিনের ছাপরাঘর নির্মাণ করে দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কোনোরকমে বসবাস করছি। দু-তিন দিন ধরে আবার নদীভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এখন ভয়ে আছি, কখন যেন আমাদের শেষ সম্বলটুকু চলে যায়।’
নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ বলেন, দুই দিন ধরে পদ্মার ভাঙনরোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। ভাঙন রোধে বাহ্রা জামে মসজিদের পেছনে পদ্মার তীরে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বস্তা ফেলা হয়েছে।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মার ভাঙনরোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাহ্রা এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। ভাঙনের বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।