দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

দিনাজপুরে গ্রামীণফোনের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোবিক্যাশসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গ্রামীণফোনের পরিবেশক মেসার্স মৌলভি ব্রাদার্সের লগ ইনচার্জ রাফায়েতুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মোতালেব প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে এ পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ করে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-৭৫৬) করা হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দিনাজপুরে গ্রামীণফোনের পরিবেশক ‘মেসার্স মৌলভি ব্রাদার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির লগ ইনচার্জ মো. রাফায়েতুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর পাসওয়ার্ড হ্যাক করেন এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাব গরমিল করে নিজের ইচ্ছামতো দৈনিক প্রতিবেদন তৈরি করতে থাকেন।

মেসার্স মৌলভি ব্রাদার্সের পরিবেশন ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের লগ ইনচার্জ ও মহাব্যবস্থাপক দুজনে মিলে দুইভাবে কোম্পানির অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একদিকে গ্রামীণফোনের পরিবেশক হিসেবে মেসার্স মৌলভি ব্রাদার্সের নামে ‘মোবিক্যাশ’ ও রিচার্জ কার্ড থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে, সিম, মোবাইল সেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

মাসুদ রানা জানান, পরিবেশক হিসেবে মৌলভি ব্রাদার্স মোবিক্যাশ দুভাবে কিনে থাকে। সরাসরি গ্রামীণফোনের কাছ থেকে কেনা হয়। আবার গ্রামীণফোনের খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছে থেকে কেনা হয়। বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে লগ ইনচার্জ রাফায়েতুল ইসলামের মোবিক্যাশের টাকা গ্রহণ করার দায়িত্ব ছিল না। তিনি প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মোতালেবের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মোবিক্যাশের টাকা গ্রহণ করেছেন। সেই অর্থ মৌলভি ব্রাদার্সের মাদার সিমে ফেরত বা জমা না করে কৌশলে তা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও খাতাপত্রে হিসাব গরমিল করে মিলিয়ে রাখায় আত্মসাতের বিষয়টি শুরুতে ধরা পড়েনি। অন্যদিকে, কোম্পানির গুদামে থাকা রিচার্জ কার্ড, সিমকার্ড, মোবাইল ফোনসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল কৌশলে বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। জালিয়াতি ধরা পড়ার পর অডিট হিসাব করে দেখা গেছে, ওই দুজন চলতি বছরের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত তিন মাস ছয় দিনে মোট ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

গ্রামীণফোন দিনাজপুরের পরিবেশক মেসার্স মৌলভি ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম কবির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য। জেলার সর্বোচ্চ করদাতা। কোম্পানির পক্ষে তিনি বিষয়টি দিনাজপুরের পুলিশ সুপার এবং শিল্প ও বণিক সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ ও বিচার দাবি করেছেন। অন্যদিকে, টাকা আত্মসাৎ করার পর হিসাব দিতে না পেরে কোম্পানির লগ ইনচার্জ রাফায়েতুল ও তাঁর বাবা উল্টো তাঁর (শামীম কবির) বিরুদ্ধে থানায় জিডি, এমনকি দিনাজপুরে কর্মরত র‌্যাব-১৩ ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলম তাঁর কার্যালয়ে দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, মৌলভি ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শামীম কবির এবং কোম্পানির লগ ইনচার্জ রাফায়েতুল ইসলাম, তাঁর বাবা ও পরিবারের সদস্য এবং কোম্পানির খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ে সালিস বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে উপস্থিত দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকটি ছিল চতুর্থ সমঝোতা বৈঠক। কাগজপত্রে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত।

পুলিশ সুপার মো. হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মৌলভি ব্রাদার্সের অভিযোগ সত্য বলেই মনে হচ্ছে। রাফাতুল ইসলাম নিজে স্বাক্ষর করে পুরো অর্থ আদায় করেছেন এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা দেননি।

অন্যদিকে, সালিস বৈঠকে লগ ইনচার্জ রাফায়েতুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন।