চুলার আগুনে মুখ চেপে ধরে গৃহবধূকে নির্যাতন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় স্বামীর বিরুদ্ধে চুলার আগুনে মুখ চেপে ধরে গৃহবধূকে দগ্ধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর হাত–পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম লোহার ছ্যাঁকাও দেওয়া হয়। এ ঘটনার সাত দিনেও আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

ওই গৃহবধূর নাম বিলকিস বেগম (২৮)। তিনি আটখলা গ্রামের হিরণ মিয়ার (৩৫) স্ত্রী। বিলকিস বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হিরণ মিয়া পলাতক রয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসপাতালে বিলকিসকে দেখতে যান। তিনি বিলকিসের চিকিৎসার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সাত হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। ইউএনও মো. শামছুজ্জামান বলেন, বিলকিস বেগম বনগজ গ্রামের জমির সরকারের মেয়ে। বিলকিসের ওপর বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে।

বিলকিস বেগম বলেন, প্রায় নয় বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। ২৪ নভেম্বর সকালে তিনি লাকড়ি দিয়ে চুলায় ভাত রান্না করছিলেন। এ সময় তাঁদের ছোট ছেলে চা–পানের আবদার করে। তাই তিনি ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে চায়ের পানি গরম করতে দেন। এ কারণে হিরণ মিয়া প্রথমে তাঁকে লাথি মারেন। একপর্যায়ে চুলার আগুনে তাঁর মুখ চেপে ধরেন। চুলা থেকে ছাই তোলার লোহার হাতল গরম করে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হিরণ তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।

বাবা জমির সরকার বলেন, যৌতুকের দাবিতে এর আগেও তাঁর মেয়েকে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনি জামাইকে দুবাই পাঠান। প্রায় দুই বছর পর সেখান থেকে হিরণ খালি হাতে ফিরে আসেন। এসে মাদক সেবন ও ব্যবসা শুরু করেন। আবারও টাকা চাইলে তিনি দিতে অপারগতা জানান। ২৪ নভেম্বর খবর পেয়ে গিয়ে তিনি মেয়েকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, দগ্ধ গৃহবধূর মুখমণ্ডল ও শরীরের অনেক স্থানের ক্ষত এখনো রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও প্রায় ১০ দিন সময় লাগবে।

বিলকিসের স্বামী হিরণ মিয়া গতকাল বুধবার মুঠোফোনে বলেন, তিনি যৌতুক নেননি। শ্বশুরবাড়ির লোকদের টাকার জন্য চাপও দেননি। বিলকিস সন্তানদের মারধর করতেন, শাশুড়িকে গালাগাল করতেন। এ জন্য স্বামী হিসেবে শাসন করাই যায়।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশাদ বলেন, পুলিশ আসামি হিরণ মিয়াকে ধরার চেষ্টা করছে।