প্রসবকক্ষে জায়গা হলো না অন্তঃসত্ত্বার!

বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসববেদনা নিয়ে হাজির হলেও এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে প্রসবকক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গাড়িদহ গ্রামের চাতালশ্রমিক ইলিয়াছ উদ্দিনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৩১) প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে তাঁকে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিনি সেখানে সন্তান প্রসবের সুযোগ পাননি।

ওই নারীর স্বামী ইলিয়াছ উদ্দিন অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর মহিলা ওয়ার্ডের নার্স সুষমা রানী মাজেদাকে পাশের ক্লিনিকে ভর্তি করতে বলেন। এতে তিনি রাজি না হলে রাত একটার দিকে মহিলা ওয়ার্ডের প্রসবকক্ষ থেকে মাজেদাকে বের করে দেন ওই নার্স। নার্স সুষমাই তখন ওই প্রসবকক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। নিরুপায় হয়ে তিনি স্ত্রীকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে খোলা আকাশের নিচেই কন্যাসন্তান প্রসব করেন মাজেদা। এ সময় তাঁর ও স্ত্রীর চিৎকারেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি।

মাজেদা খাতুনের ছোট বোন স্বপ্না খাতুন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাজেদা প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করার সময় নার্স সুষমা রানী রাত ১২টায় তাঁর বোনকে দেখে জানান, পেটের মধ্যে বাচ্চা উল্টো হয়ে আছে। মাজেদাকে বাঁচাতে হলে দ্রুত ক্লিনিকে নিতে হবে।

মাজেদা খাতুনের আরেক বোন রেজিয়া খাতুন বলেন, সরকারি হাসপাতালে ভালো ব্যবস্থা আছে জেনে তাঁরা হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে বের করে দেওয়ায় শীতের মধ্যে মাটির ওপর তাঁর বোনকে সন্তান প্রসব করতে হয়েছে। তিনি বলেন, জন্মের পর কন্যাশিশুটি তিন-চারবার মুখ খুলেছিল। কিন্তু পরে চিকিৎসক জানান শিশুটি মারা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী রিন্টু খন্দকার বলেন, ওই সময় তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কান্নার শব্দ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। মাটির ওপর ওই নারীকে প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসক ডেকে আনেন।

এ ব্যাপারে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মুস্তাফা আল্লামা তালুকদার বলেন, প্রসবকক্ষ থেকে মাজেদাকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। রাত দেড়টার দিকে একজন নার্সের মাধ্যমে জানতে পারেন, জরুরি বিভাগের সামনে মাটির ওপর ওই নারীর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তিনি গিয়ে দেখেন মাজেদা সুস্থ আছেন কিন্তু ভূমিষ্ঠ সন্তান মারা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে নার্স সুষমা রানী বলেন, তাঁর মনে হয়েছিল মাজেদার পেটের সন্তান উল্টো হয়ে রয়েছে। এ কথা তিনি মাজেদার স্বামীকে বলেছিলেন। তবে মাজেদাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করে দেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ওই রাতের ঘটনা তিনি শুনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।