পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের আহ্বান গণজাগরণ মঞ্চের

পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। আগামীকাল শনিবার থেকে সাতদিন সারা দেশে পণ্য বর্জনের জন্য প্রচার চালাবে মঞ্চ। এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে রোববার সকাল ১১টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও নিপীড়ক পুলিশের শাস্তির দাবিতে একই দিন  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেবে তাঁরা।


কর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ  সমাবেশ শেষ হয়েছে।  সমাবেশ থেকে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গতকাল মঞ্চের মিছিলে লাঠিপেটা ও নির্যাতন চালানোর জন্য দায়ী পুলিশদের শাস্তি দিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে মঞ্চ। এর মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী শুক্রবার আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। বিক্ষোভ সমাবেশের শেষ দিকে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার উপস্থিত হন।


সমাবেশে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল পাকিস্তানকে ‘জঙ্গি রাষ্ট্র এবং জঙ্গিবাদের রপ্তানিকারক’ হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর আহ্বান জানান। একাত্তরে বাঙালি ‘পাকিস্তানের নাক কেটে দিয়েছে’ মন্তব্য করে পাকিস্তানের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমাদের নাক বলে কিছু নেই। তোমরা নিজেদের দেশকে সামলাও।’

পুলিশের নির্যাতন প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, ‘পুলিশ দুর্নাম নিয়ে থাকুক আমি চাই না।’ এ বিষয়ে পুলিশকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।


সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ পুলিশি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। কাদের মোল্লার জন্য পাকিস্তান সংসদের শোক প্রস্তাব বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁকে প্রেমিক বলে পাকিস্তান প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কাদের মোল্লারা পাকিস্তানের লোক। ‘পাকিস্তানের মতো জঙ্গি রাষ্ট্রের’ সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকতে পারে না উল্লেখ করে অবিলম্বে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও দাবি জানান নাসির উদ্দীন ইউসুফ।


গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসুল বলেন, ‘সেদিন পুলিশ যে ভাষায় কথা বলেছে, সেই ভাষায় কথা বলে জামায়াত। এর মানে তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবির ঘাপটি মেরে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর লাঠিচার্জের জবাব গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা জয় বাংলার মাধ্যমেই দেবে। আমরা অহিংস বলে দুর্বল ভাববেন না। জয় বাংলার মধ্যেই আমাদের সমস্ত শক্তি। আমাদের আন্দোলনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন-আছেন-থাকবেন।’


ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ও মঞ্চের অন্যতম সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু পাকিস্তানের শোক প্রস্তাবের জবাব দিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন খুশী কবির, শামসুল ইসলাম সুমন, বজলুর রহমান মিঠু, জনার্দন দত্ত, শাহ আবদুল বাতেন, শিপ্রা বোস, লাকী আক্তার, বীণা শিকদার, প্রদীপ সাহা, আবদুর রউফ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে গণজাগরণ মঞ্চের একটি মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।


গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা ও নির্যাতন চালায়। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ
সরকারসহ ২০-২৫ জন। সেখান থেকে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তান সরকারের শোক ও নিন্দা প্রস্তাবের ঘটনায় দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অস্থায়ীভাবে ছিন্ন করার দাবিতে মঞ্চ ওই মিছিল করে।