দোহারে দাঁতের চিকিৎসায় দুর্দশা

দোহার পৌরসভার জয়পাড়ায় আধুনিক বিপণিবিতান আর সরকারি-বেসরকারি অফিসের গমগমে ভিড়। সেসব ছাপিয়ে একটু পরপর চোখে পড়ে বেসরকারি দাঁতের চিকিৎসালয়। খোঁজখবর নিয়ে আর ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগের সেবার মান খারাপ। অনিয়মও আছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে দোহার উপজেলা মাত্র ঘণ্টা তিনেকের পথ। এখানকার অনেক মানুষ বিদেশে কাজ করেন। প্রবাসী আয়ের সুবাদে মানুষজন মোটামুটি সচ্ছল। বেসরকারি চিকিৎসাসেবার বাজারটি বড়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে দোহারে দাঁতের চিকিৎসালয় আছে ১৫টি, এর ১০টিই পৌরসভায়।
দাঁতের চিকিৎসালয়গুলো ছোট, চিকিৎসকের চেম্বারের মতো। একজন নিবন্ধিত দন্তচিকিৎসক স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চিকিৎসালয় খুলতে পারেন। পৌরসভার কর কার্যালয়ের তালিকার তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, সদরে অন্তত তিনটি চেম্বার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। তা ছাড়া গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে আটটি দন্তচিকিৎসালয় ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ চেম্বারে অচিকিৎসকেরা সেবা দিচ্ছেন। অনেক চেম্বার ঘুপচি, সাজসরঞ্জাম ও ঘরদোরও মলিন।
এসব চেম্বারের মাত্র একটির মালিক ও চিকিৎসক যথাযথভাবে নিবন্ধিত। তিনটি চেম্বারে ঢাকা থেকে চিকিৎসক আসেন। বাকিগুলোতে চিকিৎসকের কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা চিকিৎসা সহায়তাকর্মীরা। চারটিতে অচিকিৎসক মালিকেরা নিজেরাই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদূরে আলিফ ডেন্টাল কেয়ার। এর মালিক এম এ কুদ্দুস বললেন, লাইসেন্সের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। তিনি অবশ্য কোনো কাগজ দেখাননি। কুদ্দুস নিজে চিকিৎসক নন। তাঁর কথা, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে সব চিকিৎসকের অনুমোদন আছে।’ এই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছেন। আর ঢাকা থেকে নিয়মিত একজন চিকিৎসক আসেন। তবে তিন দিন ঘুরে দেখা যায়, কুদ্দুস নিজে এবং ওই টেকনোলজিস্ট চিকিৎসকের মতোই রোগী দেখছেন।
অননুমোদিত চিকিৎসকের হাতে খারাপ সেবার দায়ে গত ২৯ আগস্ট উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত আলিফ ডেন্টালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ বলছে, একই কারণে সেদিন সবুজ ডেন্টাল কেয়ার এবং পপুলার ডেন্টাল কেয়ারের যথাক্রমে ২০ ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল। দাঁতের চিকিৎসালয়গুলোতে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে মুক্তা ডেন্টাল কেয়ার। ঘুপচি একটি ঘরে দাঁতের চিকিৎসার দুটি চেয়ার বসানো। রোগী চেয়ারে বসার পর শুধু চিকিৎসকের দাঁড়ানোর জায়গাটুকু থাকে। চেম্বারটির মালিক গোপাল চন্দ্র রায় দাঁতের চিকিৎসক নন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ‘দাঁতের সার্জন’ এখানে রোগী দেখেন। কিন্তু উপজেলা হাসপাতালে প্রায় এক মাস ধরে কোনো দাঁতের সার্জন নেই—এ কথার জবাবে তিনি বলেন, সেখানকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আর সহকারী সার্জনরা এখানে বসেন। তাঁদের দেখাদেখি গোপাল নিজেও এখন দাঁত তোলেন এবং দাঁত ও মাড়ির ময়লা পরিষ্কার (স্কেলিং) করেন।
নারিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শামসুদ্দিন তাঁর মেয়ের দাঁত ফেলতে মুক্তা ডেন্টালে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে একবার আসছিলাম। বাড়ি থেকে কাছে হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম আল আমীন বলেন, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের ঠিকঠাক কাগজপত্র নেই। সেবার মান ভালো না। তাদের আপাতত কাজ বন্ধ রেখে এসব ঠিক করতে বলা হয়েছে। ঠিক না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।