বিচিত্র সবজির বিপুল সমারোহ

ফার্মগেটের খামারবাড়ি প্রধান ফটকের সামনে বড় করে লেখা জাতীয় সবজি মেলা। সবজির আবার মেলা হয়! শীতের এই সময়ে বাজারে গেলেই তো হরেক রকমের সবজি সস্তায় মেলে। এসব কথা চিন্তা করে যাঁরা মেলায় যাননি, তাঁরা হয়তো ভুলই করেছেন। মেলায় ঢুকলেই প্রথমে চোখে পড়বে ৪২ কেজি ওজনের মিষ্টিকুমড়া। ১৬ জাতের শিম। কামরাঙা ফলের মতো দেখতেও শিম হতে পারে, তা এই মেলায় গেলেই দেখা যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আ কা মু গিয়াস উদদীন মিল্কী মিলনায়তন চত্বরে তিন দিনের ওই সবজি মেলা গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। সবজি নিয়ে কাজ করে এমন ১০টি সরকারি সংস্থা ও ৩২টি বেসরকারি সংস্থা মেলায় তাদের পসরা নিয়ে বসেছে। তবে সবাই যে তাদের হরেক রকমের সবজি ও সবজি উৎপাদনের উপকরণ বিক্রি করছে, তা নয়। ১০-১২টি সংস্থা সবজি ও সবজি থেকে উৎপাদিত খাবার বিক্রি করছে। অন্যরা মূলত তাদের সবজিবিষয়ক পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শনের জন্য মেলায় অংশ নিয়েছে।
দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এই মেলা কাল শনিবার পর্যন্ত চলবে। জাতীয় সবজি মেলা ২০১৭-এর প্রতিপাদ্য, ‘সুস্থ সবল স্বাস্থ্য চান, বেশি করে সবজি খান’। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হরেক রকমের সবজি দেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। নতুন নতুন সবজির সঙ্গে শহরবাসীর পরিচয় ঘটবে বৃহৎ পরিসরের এ মেলার মাধ্যমে। সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে এই মেলা।
মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গতকাল কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সবজিতে হাইব্রিড জাতের অনুমোদন দেওয়ার পর অনেকে সমালোচনা করেছিল। সমালোচকদের কথা শুনলে আজকে দেশে সবজি খাতে এই উন্নতি হতো না। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবজিতে মুনাফা বেশি হওয়ায় কৃষক তাতে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশে ১২ মাস সবজি উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ ও আবহাওয়া রয়েছে। কারণ আমরা দিনের সূর্যালোক ঠিকমতো পাচ্ছি, যা সবজি উৎপাদনে অত্যন্ত সহায়ক।’
মেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সবজি উৎপাদনে দেশে বিপ্লব ঘটেছে। সবজি উৎপাদনের এ অর্জন ও সফলতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগ অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে।’ সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম আযাদ। সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে ছিল ‘পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় নিরাপদ সবজি চাষ’ শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমদ। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তর, সংস্থার কর্মকর্তা, কৃষিবিদ, কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষকেরা অংশ নেন।