রেললাইনে লোহার পাতের পরিবর্তে বাঁশ

কুড়িগ্রামে রেললাইনের স্লিপারের ওপর লোহার পাতের পরিবর্তে লাগানো হয়েছে বাঁশের ফালি l ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রামে রেললাইনের স্লিপারের ওপর লোহার পাতের পরিবর্তে লাগানো হয়েছে বাঁশের ফালি l ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে রেললাইনের অন্তত তিন জায়গায় কাঠের স্লিপারের ওপর লোহার পাতের পরিবর্তে বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া এই রেলপথের বিভিন্ন স্থানে স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যবহার করা হয়েছে গাছের গুঁড়ি। ফলে ট্রেন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, উলিপুর পাঁচপীর স্টেশনের কাছে দুর্গাপুর স্কুলের পেছনে, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-সংলগ্ন মুক্তারাম ত্রিমোহনী এলাকায় ও টগরাইহাট রেলস্টেশনের কাছে জোতগোবরধন এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার দীর্ঘ রেলসেতুর ওপর কাঠের স্লিপারে বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে। এই রেলপথের কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ কিলোমিটারে বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট। অনেক জায়গায় নাট-বল্টু নেই। কয়েক জায়গায় রেললাইন সোজা রাখতে গাছের গুঁড়ি পোঁতা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রেনের এক চালক বলেন, ‘লালমনিরহাটের তিস্তা স্টেশন থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাই। বিশেষ করে বর্ষায় ঝুঁকি বেড়ে যায়। লাইনের নিচের মাটি সরে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।’

কুড়িগ্রাম রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ নলেজ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের রমনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর ট্রেন চালু, চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ প্রস্তাবিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে রেললাইন সংযোগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। গত ৫ ডিসেম্বর রেলওয়ের মহাপরিদর্শক মো. আকতারুজ্জামানরেলপথ পরিদর্শনে আসেন। তিনি রেলপথ সংস্কারসহ আন্তনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত রেলপথ সংস্কার করার দাবি করছি।’

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রেললাইনে গাছের ডাল ও সেতুতে বাঁশ ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। আমরা সাধারণত বড় বা মেজর সেতুতে কাঠের স্লিপার যাতে স্থানচ্যুত না হয় সে জন্য লোহার পাত ব্যবহার করি। কিন্তু তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের সেতুগুলো মাইনর (ছোট) হওয়ায় সেগুলোতে বাঁশের ফালি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া না যাওয়ায় আমরা স্থানীয়ভাবে এটা করেছি।’

রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে প্রকৌশলী আরিফুল বলেন, কয়েক বছর ধরে এই পথে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করছে। রেললাইন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে কয়েক দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হলেও কোনো বরাদ্দ মেলেনি।